ইসিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই: মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা করে আসা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ঢাকা সিটি ভোটের পাঁচদিন আগে আবার নিজের বক্তব্য নিয়ে সংবাদকর্মীদের সামনে এসেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2020, 09:03 AM
Updated : 26 Jan 2020, 09:03 AM

নিজের কার্যালয়ে রোববার দুপুরে লিখিত বক্তব্য নিয়ে হাজির হন তিনি, যেখানে তিনি দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। কমিশনে নিজের কথা বলার জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে বলেও তার অভিযোগ। 

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন মাহবুব তালুকদার।

‘আমি কোনো দলের নই’

একটি দলের স্বার্থী রক্ষায় নিরবাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়া এবং তার পদত্যাগের দাবি  সরকারি দলের পক্ষ থেকে এসেছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মাহবুব তালুকদার বলেন, “যে কেউ যেকোনো কিছু বলতে পারেন। যেকোনো তকমা আমার পেছনে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু আমার অতীত ইতিহাস যারা জানেন তারা কখনই বলবেন না- আমি কোনো নির্দিষ্ট দলের। আর আমি যে মুহূর্ত থেকে এ চেয়ারে বসেছি সে ক্ষণ থেকে আমি কোনো দলের নই।”

কোনো দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

“আমার সঙ্গে কোনো মতবাদের সম্পর্ক নেই। আমি আমার বিবেক দ্বারা পরিচালিত। যারা আমাকে নিয়ে কোনো আমার মধ্যে রঙ ধরাতে চান বা আমার মধ্যে দেখতে চান- এটা তাদের রাজনৈতিক একটা বিষয় হতে পারে। কিন্তু আমি এর বিরুদ্ধে।”

ইসির ভেতরেই ‘সংখ্যালঘিষ্ঠ’

লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এতে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সভায় আমার প্রস্তাব বা সুপারিশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে অগৃহীত হয়। আমাকে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসেবে না দেখে আমার বক্তব্যের বিষয়বস্তুর মেরিটকে বিবেচনায় নেয়া সমীচীন বলে মনে করি। আমার ধারণা কমিশন সভায় আমার বক্তব্য প্রদানের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ইসির অভ্যন্তরেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।

“নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করতে আমাদের কর্মকাণ্ডে তা দৃশ্যমান হওয়া বাঞ্ছনীয়,” উল্লেখ করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার আরও জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তা নিয়ে কমিশনে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

“এসব অভিযোগের পেছনে যে অসন্তোষ আছে, তা বিস্ফোরিত হলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যথাপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে না, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।“

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে নিজের কিছু বক্তব্য রয়েছে উল্লেখ করে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এই নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। উক্ত নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে তিনটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়, তার কোনোটিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি, অনিয়ম বা প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি।

“এছাড়া কোনো কমিশন সভায় এসব বিষয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। আগামী ২৮ জানুয়ারি তারিখে যে নির্বাচন কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সম্পর্কে কোনো বিষয় এজেন্ডাভুক্ত নয়,” লিখিত বক্তব্যে বলেছেন মাহবুব তালুকদার।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে গত ৯, ১৩, ১৬ ও ২০ জানুয়ারি তার দেওয়া চারটি আনঅফিসিয়াল (ইউও) নোট ‘রীতিমত উপেক্ষা’ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

“এসবের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গৃহীত হয়নি। যদি আমার বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য হয়, তাহলেও আমাকে তা জানানো উচিত ছিল।”

মাহবুব তালুকদার বলেন, ১৬ জানুয়ারি দেওয়া ইউও নোটের মাধ্যমে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তথ্যাদি জানাতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “এসব অভিযোগের বিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমার কাছে পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সেই নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। কোনো তথ্যই আমাকে সরবরাহ করা হয়নি।”