প্রার্থীদের শিক্ষা, পেশা ও মামলার হিসাব দিল সুজন

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা লড়ছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা এবং মামলার আসামি কতজন; সে সব তথ্য তুলে ধরেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2020, 04:18 PM
Updated : 25 Jan 2020, 04:18 PM

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত প্রাক-নির্বাচনী প্রার্থী বিশ্লেষণে সংগঠনটি বলেছে, ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তুলনায় এবার ঢাকার দুই সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বকারী দিলীপ কুমার সরকার।

তিনি বলেন, এ বছর ঢাকা উত্তরে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, টিকে আছেন ৩৩৫ জন। দক্ষিণে ৫৬৯ জন দাখিল করেছিলেন, ৪১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার সব মিলিয়ে ৭৪৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এর মধ্যে ১৩ জন মেয়র পদে। ১২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৫৭৭ জন এবং ৪৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৫৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। ফলে উত্তরে ৫৪টি ও দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড হয়েছে। গত নির্বাচনে ৩৬ ও ৫৭টি ওয়ার্ডে প্রার্থী সংখ্যা আরও বেশি ছিল।

“২০১৫ সালে উত্তরে প্রার্থী ছিল ৩৮২ জন, এবার ৩৩৫ জন। দক্ষিণে ছিল ৫০২ জন, এবার ৪১৪ জন।”

ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের দুজন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং দুজন সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

ব্যবসায়ী বেড়েছে

ঢাকা উত্তরের ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন (৫০ শতাংশ) ব্যবসায়ী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী শাহীন খান।

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক চিকিৎসক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শেখ ফজলে বারী মাসউদ শিক্ষক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান সমাজসেবক।

এই সিটিতে ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২০৩ জনের পেশা ব্যবসা। এছাড়া নয়জন তাদের পেশার কথা উল্লেখ করেননি।

প্রার্থীদের পেশা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর হার ৬৭.২০ শতাংশ থেকে ৭২.৮১ শতাংশ হয়েছে। আর দক্ষিণে ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর হার ৭১.২৮ শতাংশের জায়গায় ৭৩.৫৯ শতাংশ হয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

ঢাকা উত্তরের ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে দুজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও তিনজনের স্নাতক। তবে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী শাহীন খানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

ঢাকা দক্ষিণের সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন উচ্চশিক্ষিত। তবে ইসলামী আন্দোলনের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান ও জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৫৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। ৭৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে; আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ২২ জন।

২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে (৫৯.৪০ শতাংশের স্থলে ৬১.৩২ শতাংশ), উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার কমেছে (২৭.৪১ শতাংশের স্থলে ২৫.২৭ শতাংশ)।

ঢাকা দক্ষিণের ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে।

মামলার হিসাব

ঢাকা উত্তরের ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সিপিবির আহাম্মদ সাজেদুল হকের বিরুদ্ধে অতীতে একটি মামলা ছিল, যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। আর কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে কখনও মামলা দায়ের হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণের সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে, তিন জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। একজনের বিরুদ্ধে আগেও মামলা ছিল এখনও আছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাপসের বিরুদ্ধে অতীতে দুটি মামলা থাকলেও তা খারিজ হয়ে গেছে। বিএনপির ইশরাকের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা না থাকলেও এখন দুটি মামলা। আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি মামলা ছিল, যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বাহরানে সুলতান বাহারের বিরুদ্ধে একটি ৩০২ ধারার মামলাসহ দুটি মামলা বিচারাধীন।

এছাড়াও উত্তরের মোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৯১ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪৪ জনের (১৩.২৯ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।

দক্ষিণের ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ৫০ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বকারী দিলীপ কুমা অভিযোগ করেন, প্রার্থীদের হলফনামার সঙ্গে যুক্ত আয়কর বিবরণী ও সম্পদের হিসাব নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও এবার তা করা হয়নি। সুজনের পক্ষ থেকে বার বার তা পাওয়ার চেষ্টা করা হলেও কমিশন দেয়নি।

“প্রার্থীদের হলফনামা আকারে বিভিন্ন তথ্য কমিশনে দিতে হয়। সেই তথ্যগুলো আমরা তুলে ধরি যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে ভালো করে জেনে বুঝে ভোট দিতে পারেন। তথ্যের জন্য যখন নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গেলাম সেখানে দেখলাম গত জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের আয়কর বিবরণী ওয়েবসাইটে আছে, এইবার ওই কলামটাই তুলে দেওয়া হয়েছে।

“এ বিষয়ে আমরা মৌখিকভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। গত ১৩ তারিখে একটা চিঠি দিয়েছি, ১৫ তারিখ আরেকটি চিঠি দিয়েছি। তার পরেও তারা দেননি। পরে সচিবের কাছে একটা মেইলও করা হয়। তথ্যগুলো সিডিতে বা পেনড্রাইভে নিয়ে আসতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হয়নি। আমরা সামন্য কিছু সংগ্রহ করতে পেরেছি।”

সুজনের এই কর্মকর্তা বলেন, আচরণবিধি ২০১০-এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এগুলো নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দিতে হবে।

“তার পরেও আমাদের মনে হয়েছে তাদের একগুয়েমি, তাই তারা দিচ্ছে না। সর্বশেষ একটা উকিল নোটিশও দেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে, গত বৃহস্পতিবার সেই সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না চিন্তা করা হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান। উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও নাজিমউদ্দিন, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শফিউদ্দিন আহমেদ।