গুরুত্ব বোঝাতে ধর্ষককে ক্রসফায়ারের কথা বলেছিলাম: চুন্নু

সংসদে ধর্ষককে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার দাবি করার পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তিনি ধর্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার গুরুত্ব বোঝাতে ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2020, 04:46 PM
Updated : 23 Jan 2020, 04:46 PM

বৃহস্পতিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

গত ১৪ জানুয়ারি ধর্ষককে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার দাবি করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। ওই দিন আলোচনার সূত্রপাত করেন চুন্নু।

জাতীয় পার্টির এই নেতা বৃহস্পতিবার সংসদে বলেন, “আসলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা সাপোর্ট করি না। এটা গুরুত্বের জন্য বলেছিলাম। ধর্ষণের বিষয়টা আসলেই এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ব্যাধি। গত এক বছরে ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং ৮১৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। জোর দাবি জানাচ্ছি, ধর্ষণের আইন আমূল পরিবর্তন করা দরকার।”

আর্থিক অনিয়মের কথা তুলে ধরে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, দেখার কেউ নেই। ব্যাংক পরিচালকেরা নিজেদের ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ২৫টি পরিচালক ব্যাংকে ইনভেস্ট করেছেন ৬ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর তারা পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর চেয়ে বড় ব্যবসা আর কী হতে পারে?”

মুজিবুল হক চুন্নু (ফাইল ছবি)

চুন্নু বলেন, “আমি জানি না বাংলাদেশ ব্যাংক কী করে, অর্থ মন্ত্রণালয় কী করে। এই ঋণগুলো এমনি এমনি যায় না। নিয়মের মধ্যে পড়ে। এই নিয়ম কে দেখে কে দেখে না, বুঝি না। জনতা ব্যাংকের এনন টেক্সের ৫ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের এমডি আব্দুস ছালামের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আইন ও নিয়ম তোয়াক্কা না করে তিনি সহায়তা করেছেন। এনন টেক্সের মালিক ইউনূস বাদল নিজেই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক, কিন্তু দেখানো হয়েছে বিদেশি কোম্পানি।

“উন্নয়ন হয় ঠিক আছে। কিন্তু অনেক দুর্নীতিও হয়। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান। জানি না সে অভিযানটা কিছু দিন চলার পর আর কোনো খবর নাই। এই অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা কোনো না কোনো দলের কর্মী। শুধু কি রাজনৈতিক কর্মীই ক্যাসিনো চালিয়েছিল? তাদের সাথে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন, প্রশাসনের লোকজন কি জড়িত ছিল না? তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না।”

সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, “গুলশান-বনানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যে বাড়িগুলো সেগুলো কাদের? হিসাব নেওয়া হোক। কয়টা বাড়ি রাজনীতিকদের, কয়টা আমলাদের আর কয়টা বিভিন্ন বাহিনীর। গত ১৫-২০ বছরে যারা মন্ত্রী এমপি, আইজি ছিলেন সামরিক-বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কমকর্তা রাজনৈতিকদের সম্পদের হিসাব দেওয়া হোক। শুধু আমরাই জেলে যাব, আমাদের নামে মামলা হবে, যিনি ধরবেন তিনি কত টাকা আয় করেছেন, মাসোহারা নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে কিছু হবে না, তা হয় না। ক্যাসিনো শুধু সম্রাট চালিয়েছিল? আর কেউ ছিল না? তাদের ধরা হয় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হলে সে যে-ই হোক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে, কিন্তু সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটা উদ্বেগের বিষয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার ছাত্রকে নির্যাতনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারের সদিচ্ছার অভাবে শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে যদি জ্ঞান চর্চা, মতামত প্রকাশ করা না যায় তাহলে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আইন করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”

দেশ ‘একদলীয় শাসনের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হারুন।

তিনি বলেন, “ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দল আচরণবিধি মানছে না। পুলিশ, নির্বাহী হাকিম কেউ দায়িত্ব পালন করছে না। নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রয়োজন নেই। নিজেরা আচরণবিধি, আইন তৈরি করে নিজেরাই ভঙ্গ করছেন।”