বুধবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন অ্যান্ড প্লানিং ল্যাব’ শীর্ষক আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, “প্রযুক্তি মানুষের জীবনমানকে যেমন সহজ করেছে তেমনি এর প্রয়োগের ক্ষেত্রও দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি পুরাতনকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নিচ্ছে। উন্নত দেশগুলো নবতর প্রযুক্তির সাথে দ্রুত খাপ খাইয়েনিতে পারলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা চ্যালেঞ্জ।
“বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলা করা। পৃথিবী ক্রমেই ক্যাশলেস হচ্ছে। আসছে অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তি। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ তৈরি করতে হবে।”
দেশীয় প্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “দেশীয় প্রযুক্তিবিদদের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমি আশা করি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগসহ দেশের প্রকৌশল, বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”
অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির ভারী ভারী কথা আমার সম্যক বোধগম্য না হলেও আমি এর গুরুত্ব ঠিকই অনুধাবন করতে পারি।
মোবাইল ফোনের কারণে যোগাযোগ সহজ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবার হাতেই আজকাল মোবাইল ফোন। এক একটা মোবাইল ফোন যেন বিশ্বটাকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
“এটি ব্যবহার করে মানুষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থানরত এমনকি মহাকাশে উড্ডয়নরত মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। আমার মনে হয় এমন এক সময় আসবে যখন কোনো গ্রহে অবস্থানরত নাতি তার নানাকে বলবে, তুমি নাশতা খেয়েছো, পৃথিবীতে তোমরা কেমন আছো?”
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “শিক্ষার গুণগত মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন সম্মানিত শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধে জাগ্রত হয়ে আপনারা উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জ্ঞানের নব নব দিগন্ত উন্মোচন করবেন।
“একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার শিক্ষকই আদর্শ। তাই জ্ঞান আহরণ, লালন, অনুশীলন ও বিতরণে আপনাদের অধিক তৎপর, আন্তরিক ও অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম’ সুবিধা চালু হলে শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গতিশীলতা আসবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, “ডিজিটালাইজেশন শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়-বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এর অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিফর্মড ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরির ‘ডিজাইন এবং পরিকল্পনা ল্যাব’ সম্পন্ন হওয়ায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিজিটালাইজড করার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেল।”
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া প্রমুখ।