বুধবার বিকালে পুরান ঢাকার কারা কনভেনশন হলে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ‘ব্যবসায়ী সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে নানা দাবি শুনে একথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী।
তাপস বলেন, “আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ীদের সমস্যা আমি অনুধাবন করতে পারি। একজন ব্যবসায়ী কী চিন্তা চেতনা করেন এবং তার দৈনন্দিন কী চিন্তা চেতনা থাকে, কী সমস্যা থাকে, সেটা আমি অনুধাবন করি।
“এটুকু আপনাদের আমি বলি, আমার কাছে কোনো জাদুর কাঠি, কিংবা জাদুর টুপিও নেই। আমি একজন বাস্তবভিত্তিক ব্যক্তি। আপনাদের কোনো জাদুকরী স্বপ্ন দেখাব না। আমার দেওয়া পাঁচটি ধাপের মধ্যে কোনো স্বপ্ন নেই, পঞ্চমের বাস্তবতা আছে। আমি এটুকু বলতে পারি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হবে একটা বাস্তবেই ব্যবসায়ীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।”
ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার হয়রানির অবসান ঘটিয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাপস। ব্যবসায়ীদের জন্য সিটি করপোরেশনে হেল্প ডেস্ক চালুর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
“আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী, আমাকে যারা বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তারা আমাকে এই পথে পা দিতে না করেছিল । অনেকে বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে হয়ত ভুল পথে পা বাড়ানো হবে। এছাড়া এত সমস্যা জর্জরিত সংকট, সেটাকে পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব? নাকি বদনাম বা ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে যেতে হলে হবে।
“তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। পরবর্তীতে যখন দেখল আমি সিদ্ধান্ত অনড়, তখন তারাও উপলব্ধি করতে পেরেছে, কারণ আমার উপর তাদের আস্থা আছে। আমি যখন সিদ্ধান্ত নিই তখন বুঝে-শুনেই নিই, পারব বলেই নিই।”
তাপস বলেন, “সংসদ সদস্য পথ থেকে যখন পদত্যাগ করলাম, জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি যখন ছেড়ে দিলাম, তার আগের রাতে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাটাই ছিল এটা যে, হারাব না অর্জন করব? ব্যর্থতা না সফলতা? স্বপ্ন বাস্তবায়ন না ব্যর্থতায় পর্যবসিত একটি জীবন? ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করিনি।”
ব্যবসায়ীদের দেওয়া ২৮টি সমস্যার তালিকা দেখে তা সমাধানে আশাবাদ প্রকাশ করেন এই প্রার্থী।
“আমাকে তালিকা দেওয়া হয়েছে, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কিছু মতামত দেওয়া হয়েছে। এখানে মাত্র ২৮টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে, আমি বিচলিত নই। আমি ভেবেছিলাম ২৮০০ সমস্যা হয়তবা দেবে।”
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে এই ব্যবসায়ী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এ কে আজাদ, শফিউল আলম মহিউদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, রেজাউল করিম রেজনু, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবনের প্রতিশ্রুতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানান নৌকার প্রার্থী তাপস।
“আমি আপনাদের সমর্থনে নির্বাচিত হতে পারলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোনো উইপোকার জায়গা হবে না। সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে এটাকে গড়ে তুলব। কোনো উৎকোচ, অতিরিক্ত ব্যয় অথবা হয়রানির কোনো অবকাশ সেখানে থাকবে না।”
ঢাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাপস।
২০৪১ সালকে লক্ষ্য ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি অবকাঠামো, উন্নয়ন, রাস্তা-নর্দমা, যেটাই আমরা করি না কেন, সেটার মান নিরূপণ করে অন্ততপক্ষে ১০ বছরের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে।”
হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর আশ্বাস
তাপস বলেছেন, তিনি মেয়র হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়বে না বরং কমবে।
“হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হবে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয় করার জন্য কমতে পারে, বাড়বে না। আমাদের অনেক সেবা আছে যেগুলো আমরা এখনও দিই না, সেগুলো ঢাকাবাসীর কাছে পৌছে দেব। আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজের অর্থায়নে ঢাকাবাসীর কাছে সেবা পৌছাবে।”
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গাড়ি রাখার স্থান নির্মাণের আশ্বাস দেন তাপস।