ওএসডি বিষয়ে হাই কোর্টের রায় স্থগিত

সরকারি কর্মকর্তাদের ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করে রাখা যাবে না বলে হাই কোর্টে যে রায় দিয়েছিল, তা স্থাগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2020, 11:36 AM
Updated : 2 Sept 2020, 01:30 PM

রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আট সপ্তাহের জন্য রায়টি স্থগিত করে আবেদন শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

হাই কোর্টে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওএসডি সংক্রান্ত হাই কোর্টের রায়টি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত, আবেদনটি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে।”

কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা যাবে না বলে গত ৮ জানুয়ারি রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট।

যেসব সরকারি কর্মকর্তাকে ওই সময়ের বেশি ওএসডি করে রাখা হয়েছে, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুনর্বহালের নির্দেশও দিয়েছিল আদালত।

‘জনস্বার্থে’ সাবেক সচিব আসাফ উদ-দৌলার করা এক রিটে আট বছর আগে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

১৫০ দিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে যে কর্মকর্তারা ওএসডি হয়ে আছেন, তাদের পুনর্বহালসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি করতে রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই কমিটির প্রধান হবেন একজন জ্যেষ্ঠ সচিব। আর জনপ্রশাসন সচিবকে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে রায়ে নির্দেশ দেয় আদালত।

রায়ের পর আইনজীবী অনীক আর হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ‘গত বছরের এপ্রিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি কর্মকর্তা আছেন ‘৭৯৫ জন’।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “যেসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে তারা সবাই দেশের নাগরিক হিসেবে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই সরকারি চাকরি পেয়েছেন। তাদের কেন ওএসডি করা হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।”

ওএসডি থাকা অবস্থায় অনেক কর্মকর্তার মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “ওএসডি কর্মকর্তারা কেবল অফিসে যায় আর বাসায় থাকে। কোনো কাজ করেন না। জনগণের করের টাকায় কাজ না করেও বেতন পান। তারা সামাজিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগেন। এমনকি সন্তানের বিয়ে দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়েন।

“ফলে এ সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২০, ৩১, ৮৪ ও ৮৮ অনুচ্ছেদেরে সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সালের ৩১ মে জনস্বার্থে সাবেক সচিব আসাফ উদ-দৌলার রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি করে ওই বছরেরই ৪ জুন হাই কোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়।

নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা (ওএসডি) করে রাখা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

ওএসডি করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কেন করা হবে না- তা ও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৮ জানুয়ারি রায় দিয়েছিল উচ্চ আদালত; যা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে স্থগিত করে দিল চেম্বার আদালত।