সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায় সোমবার

প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মামলার রায় হবে সোমবার।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2020, 10:28 AM
Updated : 19 Jan 2020, 11:54 AM

২০০১ সালে যে দিনটিতে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল, ১৯ বছর পর সেই দিনটিতেই এই রায় দেবেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর মামলাটিতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের এই দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন বলে ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার জানিয়েছেন।

শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলায় এখন আসামি রয়েছেন ১২ জঙ্গি। তার মধ্যে চারজন রয়েছেন কারাগারে, বাকি আটজন পলাতক।

এদিকে পল্টন হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে এক বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

পাশাপাশি এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা বিচারের আওতায় আসেনি বলে সিপিবি নেতাদের অভিযোগ।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দায়সারাভাবে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই বোমা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের পাশাপাশি এর নেপথ্যের হোতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

নিহত সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সিপিবি নেতারা।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির লাল পতাকা সমাবেশে এই বোমা হামলা হয়েছিল।

তাতে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর মারা যান খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায়। হামলায় আহত হয় শতাধিক।

ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন।

তিনি আদালতকে বলেন, তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরিত হয়েছিল পেতে রাখা বোমাটি।

সিপিবির সমাবেশে হামলার পর ওই বছরের ১৪ এপ্রিল রমনায় বর্ষবরণের উৎসবে একই ধরনের বোমা হামলা হয়। কিন্তু তখন জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও তাদের তৎপরতার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর ছিল কম।

এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে ২০০৫ সালে সিপিবির সমাবেশে হামলার মামলাটির তদন্ত পুনরায় শুরু হয় আদালতের আদেশে।

সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিচার, পাঁচ বছর পর তা রায়ের পর্যায়ে এল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি।

মামলার অভিযুক্ত ১৩ আসামি হলেন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

বোমা হামলার বিচার দাবি করে আসছে সিপিবি।

আসামিদের মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আটজন পলাতক।

মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পল্টন হত্যাকাণ্ডের ১৯তম বার্ষিকীতে অন্য বছরগুলোর মতোই কর্মসূচি নিয়েছে সিপিবি।

সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে শহীদ স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দেওয়া হবে, সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে।