৩০ জানুয়ারির ভোট সামনে রেখে সকাল-সন্ধ্যা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। দুই সিটি মিলিয়ে মেয়র পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন মাত্র চারজন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, তিনি কথার চেয়ে কাজে বেশি বিশ্বাস করেন। নির্বাচিত হলে সব প্রতিশ্রতির বাস্তবায়ন করবেন তিনি।
শুক্রবার ডিএনসিসির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাউনিয়া মোড়, কালীবাড়ি, বালুরঘাট, মানিকদী, মাটিকাটা, লালাসরাই, ভাষানটেক, মিরপুর-১৪ নম্বর এলাকায় গণসংযোগ করেন আতিকুল ইসলাম।
মাটিকাটা গিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কথা কম বলে, কাজ বেশি করে। আমিও বিশ্বাস করি কথা কম, কাজ বেশি। আমিও বলে যাই যেসব প্রতিজ্ঞা আমি করে যাব সেই কাজগুলো হবে ইনশাআল্লাহ।”
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোটে দাঁড়ানোর আগে নয় মাসে যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা তিনি করেছেন নির্বাচিত হয়ে সেসব বাস্তবায়ন করতে তৈরি পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী।
নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্রশস্ত রাস্তা, সড়কবাতি ও স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ শুরুর প্রতিজ্ঞা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে গণসংযোগের সময় ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ৩০ জানুয়ারি পরিস্থিতি এমনভাবে শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণভাবে থাকে যাতে নিশ্চিত বিজয় ধানের শীষের হবে।”
মোহাম্মদপুরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহন পার্কিং ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “নগর নিয়ে আমাদের বিশাল পরিকল্পনা আছে। নগরটিকে আমাদের আগে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের ঢাকা অবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়ে গেছে। নিরাপত্তাহীন ঢাকা তৈরি হয়ে গেছে। আমরা একটি আধুনিক ঢাকা গড়তে চাই।”
“আমরা দেখতে চাই, আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কি ধরণের ভূমিকা রাখেন। যে বিতর্ক নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে, পূজার দিনের সাথে ভোট ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। ...আপিল ডিভিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় বঙ্গবাজার এলাকা থেকে দিনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। নেতা-কর্মীদের নিয়ে দিনভর পুরান ঢাকার সংশ্লিষ্ট এলাকার অলিগলিতে লিফলেট বিতরণ করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ভোট চান তিনি।
তাপস বলেন, “আমি একমাত্র মেয়রপ্রার্থী যিনি এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে উন্নয়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দিয়েছি। আমরা পাঁচটি ভাগে আমাদের রূপরেখা আমরা ভাগ করেছি। ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা। এই পাঁচটির সমন্বয়ে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা হবে।
“এই ঐতিহ্যবাসী ঢাকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং এর স্বকীয়তাকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করবো।”
বিএনপি প্রার্থী ও নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে তাপস বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মী ও জনগণের মাঝে একটি উৎসবমুখর সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। উনারা অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত, আমরা গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত।”
৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মীর সমীর ও সংরক্ষিত কাউন্সিল রুনা হুমায়ুন পারভীনকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।
সব বাধা ডিঙিয়ে ৩০ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণে ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণার অষ্টম দিনে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষকে ভোট দিন। সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে।
“আমরা ভোটে এসেছি ধানের শীষ নিয়ে। ধানের শীষ শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতীক, ধানের শীষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীক, ধানের শীষ তারেক রহমানের প্রতীক, ধানের শীষ পরিবর্তনের প্রতীক। ধানের শীষের ভোট দিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করুন, পরিবর্তনের পক্ষে ম্যান্ডেট দিন।
“আপনার ভোটে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন দুর্নীতিমুক্ত হবে, মহানগরীর মানুষ তার প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা পাবে।”
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় তার প্রচারণায় বাধা দেওয়ার এবং পুলিশের হয়রানির অভিযোগ করেন ইশরাক।
সকালে কদমতলী থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ইশরাক। পূর্ব জুরাইন, পোস্তগোলা, শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকা ও অলি-গলিতে পায়ে হেঁটে ধানের শীষের লিফলেট বিতরণ করেন তিনি।
খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সালাউদ্দিন আহমেদ, নবী উল্লাহ নবী, এসএম জিলানী, তানভীর আহমেদ রবিন ও শরীফ হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
“একদিকে উন্নয়নের কথা বলে বড় প্রকল্প নিয়ে ক্ষমতাসীনরা অর্থ লুট করছে, অন্যদিকে মহানগরীর সাধারণ মানুষরা কত দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অবহেলা আর দুর্নীতির কারণে ঢাকা বসসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই, নাগরিক সেবা নেই। নারী ও শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ধানের শীষের ভোট দিয়ে ‘পরিবর্তনের ঘন্টা’ বাজাতে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ রাখেন তিনি।
পরিস্থিতি সন্তোষজনক: সচিব
শুক্রবার ছুটির দিনে দিনভর প্রার্থীদের প্রচারে মহানগর ছিল জমজমাট। আচরণবিধির তোয়াক্কা করেননি তারা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে চলছে প্রচার। যদিও আচরণবিধি লঙ্ঘনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে কাগুজে হুমকি রয়েছে।
তবে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচনের কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, “এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি সন্তোষজনক। খারাপ কোনো পরিস্থিতির প্রতিবেদন নেই।
“সবই ভালো, খুবই আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশে সব প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে বিধি ভঙ্গ করলে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। ক্রমান্বয়ে কঠোরতা বাড়ানো হবে।”