ছাত্রদের ‘অস্ত্র দেখানো’ সেই আলিফ রুশদিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবরোধের মধ্যে রিভলভার বের করে পিটুনির শিকার হওয়া ব্যবসায়ী আলিফ রুশদি হাসানের অস্ত্র জমা রেখে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 03:47 PM
Updated : 16 Jan 2020, 11:05 AM

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আলিফ রুশদির কাছে একটি রিভলভার ও একটি শটগান ছিল। যাচাই করে দেখা গেছে অস্ত্রগুলো ‘বৈধ’।

“ঘটনার সময় আহত হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় আনা হয়। পরে প্রয়োজনে যে কোনো সময় থানায় এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হাজির হওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” 

ঢাকার সিটি ভোটের তারিখ পেছানোর দাবিতে ইসি ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একদল শিক্ষার্থী বুধবার দুপুরে পুলিশের বাধা পেয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে ওই সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ছেলে আলিফ রুশদি।

শাহবাগ মোড়ে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকা পড়া এক ব্যক্তি পিস্তল বের করে পিটুনির শিকার হন। পরে একজন তার কাছ থেকে পিস্তলটি কেড়ে নেয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

অবরোধের মধ্যেই তিনি গাড়ি নিয়ে এগোতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাকে বাধা দেয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আলিফ আগ্নেয়াস্ত্র বের করলে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। পরে পুলিশ এসে তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

বিক্ষোভস্থলে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাঞ্জিলাল রায় ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোকটি গাড়ি নিয়ে অবরোধ ভেঙে যেতে চাচ্ছিল। শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে সে অস্ত্র বের করে একজন শিক্ষার্থীর বুকে তাক করে। শিক্ষার্থীরা তখন ক্ষুব্ধ হয়ে মারধর শুরু করে।”

রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এসএম শামীম সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “শাহবাগ মোড়ে যানজটে আটকা পড়ে বিরক্ত হয়ে উনি (আলিফ রুশদি হাসান) লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তখন শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করেছে।”

ইসি ঘেরাও মিছিল পুলিশ আটকে দিলে শাহবাগ অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন অবরোধে আটকা পড়া এক ব্যক্তি পিস্তল বের করে পিটুনির শিকার হলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তার স্ত্রী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

আলিফ রুশদি পুলিশকে বলেছেন, তিনি ব্যবসা করেন, দুবাইয়ে থাকতেন। দেশে এসেছেন কিছুদিন আগে।

আলিফ রুশদি হাসানের ডাকনাম লেখা হয়েছে মুন। তার স্ত্রী নোমিরা আহমেদ রাখি একজন নৃত্যশিল্পী, অভিনয় ও ফ্যাশন মডেলিংও করেন। ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল প্রতিযোগিতার ২০১১ সালের আসরে দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছিলেন রাখি।

ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে আলিফ রুশদি লিখেছেন,তিনি মতিঝিলের বায়েত আলফা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গোল্ডেন ট্র্যাভেলস নামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার।

ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিজনেস ডিরেক্টরিতে সুমনা ল্যান্ডমার্ক অ্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আলিফ রুশদি হাসানের নাম পাওয়া যায়। তবে সেখানে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে তাতে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।

শাহবাগ মোড়ে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকা পড়া এক ব্যক্তি পিস্তল বের করে পিটুনির শিকার হন। পরে একজন তার কাছ থেকে পিস্তলটি কেড়ে নেয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

২০১৩ সালের জুলাই মাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সুমনা ল্যান্ডমার্ক অ্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেডের বিরুদ্ধে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তিকে বিক্রির অভিযোগ করেন কয়েকজন ক্রেতা। 

সে সময় তারা যাদের নাম ধরে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন, তাদের মধ্যে আলিফ রুশদি হাসান মুনের নামও এসেছিল।

বুধবারের ঘটনার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

শাহবাগের ঘটনায় আলিফ রুশদির বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি জানিয়ে ওসি জানান, “এই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে এর আগে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তা আমরা এখনও জানি না। তবে তার ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তার ব্যবসাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”