দুদকের মামলায় ইশরাকের বিচার শুরুর আদেশ

বিএনপির ইশরাক হোসেন ভোটের মাঠে থাকার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 12:27 PM
Updated : 15 Jan 2020, 06:59 PM

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় নয় বছর আগের ওই মামলায় বুধবার ঢাকার জজ আদালতে ইশরাকের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।

অভিযোগ গঠন করে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলম আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে দেন।

অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

দুদকের এক মামলায় দুই বছর আগে ইশরাকের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার দুই বছর সাজা হয়েছিল। ওই রায়ের আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা খোকা কয়েক মাস আগে মারা যান।

সম্পদের তথ্য-বিবরণী চেয়ে দুদক ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইশরাক ও তার বোন সারিকা সাদেককে আলাদা নোটিস দিয়েছিল।

নোটিসে তাদের নিজের নামে এবং তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের ‘স্বনামে বা বেনামে’ বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ-সম্পত্তির দায়-দেনা, আয়ের উৎসসহ বিস্তারিত বিবরণ সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু তারা তা না দেওয়ায় দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম ২০১০ সালের ২৯ ও ৩০ আগস্ট রমনা থানায় দুটি মামলা করেন। ইশরাক ও সারিকা দুদকের নোটিস চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করলেও বিফল হন।

২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর এই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০১৯ সালের ৫ মে অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন ইশরাক আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ইশরাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল।

এরপর ২০১৯ সালের  ২৫ নভেম্বর হাই কোর্টে আগাম জামিনের জন্য যান ইশরাক। তখন চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বর ইশরাক আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।  

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে আসা ইশরাকের আইনজীবী নুরুজ্জামান তপন দাবি করেছেন, তার মক্কেল দেশের বাইরে থাকায় দুদরে নোটিস পাননি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এজাহারে রমনা এলাকার মেয়র হাউজ এবং গোপীবাগের বাসার ঠিকানা থাকলেও দুই ঠিকানায় সম্পদের এই বিবরণ তলবের নোটিস পাঠানো হয়নি।

“ইশরাক তখন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে এলে থাকতেন গোপীবাগের বাসায়। গোপীবাগের বাসায় কোনো নোটিস পাঠানো হয়নি। রমনা এলাকার মেয়র হাউজে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়। নোটিস টানানোর সময় কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষী ছিলেন না।” 

আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ইশরাক বিচারকের প্রশ্নে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। 

মামলা সচল ‘উদ্দেশ্যমূলক’

নির্বাচনের মধ্যে দুদকের মামলাটি সচল করাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

তিনি বলেছেন, ধানের শীষের ‘গণজোয়ারে ভীত হয়ে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে’ সরকার পুরনো এই মামলা সচল করেছে।

বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে ইশরাক বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে সব দলের নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিজের দল আওয়ামী লীগের নেতা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গায়েব করে ফেলে। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা সচল রাখে।

“আমি গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘোষণা দিলে সরকার এই মামলা নাড়াচড়া শুরু করে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। ধানের শীষের গণজোয়ারে ভীত হয়ে সরকার আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই এই মামলা সচল করেছে।”

ইশরাক বলেন, “২০০৮ সালে আমাকে একটা নোটিস দেওয়া হয়েছিল আমার সকল উইল স্টেটমেইন্ট দেওয়ার জন্য। আমি তখন ছাত্র। পড়াশুনা করতে দেশের বাইরে ছিলাম। আমি নোটিস পাইনি। সেটার জন্য মামলা দিয়েছে। আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে হলফনামা দিয়েছি, তাতে আমার বিরুদ্ধে মামলার কথাও লেখা আছে।”

“এতে আমি বিন্দুমাত্র ভীত নই। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, এসব করে কোনো লাভ হবে না,” বলেন তিনি।