উন্নয়নে ভর করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে সরকার: আইআরআই

বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট বলে জরিপ চালিয়ে দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2020, 03:54 PM
Updated : 14 Jan 2020, 03:57 PM

শেখ হাসিনার সরকারের বছর পূর্তিতে প্রকাশিত তাদের এক জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সরকারের প্রতি সমর্থন এক বছরে অনেক বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা।

সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক বাড়লেও বাংলাদেশে মানুষ এখন দুর্নীতি ও বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ পরে আরও দুটি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের শেষ লগ্নে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুললেও তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি আইআরআরই জরিপে। এই জরিপের ফলাফল তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

এক বছর আগে চালানো আরেক জরিপের সঙ্গে তুলনা করে আইআরআই বলছে, সরকারের প্রতি সমর্থন ১৯ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে এখন ৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ শতাংশ মতামত দিয়েছেন। ২০১৮ সালের জরিপে এই অঙ্ক ছিল ৬২ শতাংশ।

অনদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৬ ভাগ বিরোধী দলের কাজে সমর্থনের কথা জানিয়েছে; যা ২০১৮ সালে ছিল ৪২ শতাংশ।

আইআরআইর এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক জোহানা কাও বলেন, “অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সাফল্য, বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে তুলেছে।”

রেডস্টোন সাইন্টিফিকের তত্ত্বাবধানে আইআরআই ২০১৯ সালের ১ অগাস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতা জন ম্যাককেইনের নেতৃত্বে পরিচালিত আইআরআইকে ডানপন্থিদের একটি হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে।

বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলায় ‘মাল্টি স্টেজ স্টার্টিফাইড প্রবাবলিটি’ নমুনায়নের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ করে এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতে জনসমর্থন বাড়ার বিষয়টি দেখতে পেয়েছে আইআরআই।

এর মধ্যে শিক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপকে সমর্থন করছে ৯০ শতাংশ নাগরিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৮৬ শতাংশ এবং যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়াও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ৭৭ শতাংশ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ৭৬ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৭৪ শতাংশ এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্র ৭১ শতাংশ সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ নিজ এলাকার সংসদ সদস্যর কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ৭৬ ভাগ নাগরিক মনে করেন, তার এলাকার সংসদ সদস্য দুর্দান্ত কাজ করছেন অথবা ভালো কাজ করছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্তুষ্ট ৫৯ শতাংশ নাগরিক, যা এক বছর আগের জরিপে ছিল ৪৮ শতাংশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্ট ৭৬ শতাংশ, নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট  ৭২ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৩ শতাংশ মনে করেন, চলতি বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় আরও উন্নতি হবে। ৫৪ ভাগ মনে করেন, অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নতি করবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উন্নতি হবে বলে মনে করেন ৪৯ শতাংশ।

বড় সমস্যা দুর্নীতি

সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়লেও দুর্নীতি এই সময় বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইআরআইর জরিপে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ শতাংশ মনে করেন বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে; ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন, দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনে। ১৯ শতাংশ দুর্নীতিকেই এখন বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

দুশ্চিন্তার আরেকটি বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে আয় বৈষম্যকে। ৬১ ভাগ মানুষ মনে করেন ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ৫৮ ভাগ নাগরিক এই বিষয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা জানান।

জরিপে অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ মাদকদ্রব্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। এছাড়াও বেকারত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়েরকথা বলেছেন যথাক্রমে ১০ ও ৭ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকার যদি তাদের ক্রমবর্ধমান জনসমর্থন ধরে রাখতে চায়, তবে দুর্নীতি দমন ও বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন আইআরআই কর্মকর্তা জোহানা কাও।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যেই হোক, সে যেন ছাড় না পায়।