বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন সদস্য সংসদে এ প্রস্তাব তুলেছেন, তার দলের এক নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতাও তাতে সমর্থন জানিয়েছেন।
আর তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেছেন, এদের ক্রসফায়ার করলে ‘বেহেস্তে যাওয়া যাবে’, কোনো ‘অসুবিধা হবে না’।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ‘ধর্ষকদের’ বিচার ছাড়াই হত্যার ওই প্রস্তাব করেন।
এক্ষেত্রে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে চুন্নু বলেন, গেল বছর ১৭ হাজার ৯০০টি নারী নির্যাতনের মামলা হয়। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ১৮৫ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৭২৭। গেল বছর ধর্ষণের পর ১২ শিশু মারা যায়। নারী মৃত্যু হয় ২৬ জনের। এ বছর ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায় ১৪টি শিশু। তার মানে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০১৯ সালে ধর্ষণ হয়েছে।
“এ বিষয়টা যদি আমরা গুরুত্ব না দেই তাহলে জাতির সামনে প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যে ধর্ষণ করা হল, যদিও সরকার জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও জনমনে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন আছে, নানা কারণে মানুষ বিশ্বাস করছে না। এরপরই সাভারে ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ধামরাইতে একই ঘটনা হয়।”
ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সংবাদমাধ্যম যে গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ করে ধর্ষকের সাজার ক্ষেত্রে সেই গুরুত্ব দেয় না মন্তব্য করে এদিকে নজর দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মুজিবুল হক চুন্নুর এই প্রস্তাব সমর্থন করে তার পক্ষে যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশে বিচারে দীর্ঘ সময় লাগার কথা তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিকালে ধর্ষণ মহামারি রূপ নিয়েছে। ছাত্রী, শিশু, নারী শ্রমিক প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ‘ধর্ষক’সহ বিভিন্ন জায়গায় আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার কথা তুলে ধরে এই সংসদ সদস্য প্রশ্ন করেন, “তাহলে বিচার হচ্ছে না কেন? বিচার কিন্তু যখন হয় তখন দেশের মানুষ মনে রাখতে পারে না। ১৫ বছর ২০ বছর পর একটা বিচার হয়।”
এই বক্তব্যের পক্ষে দৃষ্টান্ত হিসেবে শাজনীন হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা তুলে ধরেন ফিরোজ রশিদ: “১৬ বছর লেগেছে সেই একটি বিচার করতে এবং তার পিতা এদেশের স্বনামধন্য একজন শিল্পপতি। তার মেয়ের এই ধর্ষণ- হত্যার বিচার নিয়ে কোর্ট কাচারি করতে করতে ১৬ বছর পার করছে, আট কোটি টাকা খরচ হয়েছে। একজনের মাত্র ফাঁসি হয়েছে।
“আমরা মনে করি এই যে, ধামরাইয়ে বাসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হল। বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হল। কী বিচার হবে? কোনো সাক্ষী নাই। এখন পুলিশের কাছে বলবে, ১৬৪ করবে। যখন মামলায় যাবে সাক্ষী থাকবে না। তাহলে কী করতে হবে?”
“আমাদের কিছু লোক আছে, মাননীয় স্পিকার বলতে বাধা নেই, মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন- এই ধর্ষকদের কী আইন আপনি করবেন? তার কোনো ফাঁসি হবে না, জেলও হবে না এক সময় এক বছর পর বেরিয়ে যাবে, কেউ খবরও রাখবে না। একমাত্র এই মুহূর্তে যদি এই সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করতে চান, তাহলে ‘এনকাউন্টার মাস্ট’। তাকে গুলি করে মারতে হবে।”
মানবাধিকার কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি মানবাধিকার কর্মীদের বলব, আপনারা যদি ধর্ষণের শিকার হতেন, আপনার স্ত্রী, আপনার মা, আপনার বোন, আপনার কেউ যদি ধর্ষণের শিকার হত, কী হত? আমরা কী চাই? আমরা চাইছি, এই সংসদ আমরা মনে করি যে, এদের তড়িৎ বিচার। তড়িৎ বিচারে কোনো আইন হবে না। এক মাসের মধ্যে বিচার করা যাবে না। রূপাকে মারল। ভাই বগুড়া থেকে বাসে তুলে দিল। ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে মেরে ফেলল। পুলিশ সবাইকে গ্রেপ্তার করল। সেদিন পুলিশ যদি এই পাঁচজনকে গুলি করে মধুপুরে নিয়ে মারা হত, তাহলে পরে বাসে টাঙ্গাইলের পথে কেউ ধর্ষিত হত না।
“এখান থেকে স্পষ্ট বলতে চাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে, ধর্ষণ করা হল আসামি ধরা পড়েছে, মেয়ে বলছে যে সেই আসামি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাক না। সে তো পুলিশের কাছে আছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে নিয়ে যাক ওখানে, নিয়ে গুলি করে মারুক। দেখুক তার লাশ পড়ে আছে।”
ফিরোজ রশীদ বলেন, “এই মুহূর্তে চাই, এখান থেকে এই মেসেজটা দিতে চাই, আমরা এমনভাবে বলতে চাই আর কোনো ধর্ষক যেন সাহস না পায়। কারও যদি ফাঁসি হয় কেউ খবর রাখে না। এখনই যদি এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ তিন সপ্তাহের মধ্যে যদি বিচার করতে পারি, বিচার কী? একমাত্র শাস্তি এনকাউন্টারে মেরে ফেলা। ১০টা ২০টা মারা হোক ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। স্পষ্ট বলতে চাই, একমাত্র ওষুধ পুলিশ ধরার পর ওখানে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা।”
তিনি বলেন, “মাদকের ব্যাপারে যদি সাথে সাথে শেষ করে দেয়, তাহলে মাদকের থেকেও খারাপ জিনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, গার্মেন্ট শ্রমিককে ধর্ষণ করেছে, সুতরাং… ভারতে একজন ডাক্তার মেয়ে বাস থেকে নামার পর চারজনে তাকে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে। দুদিন পর ক্রসফায়ার দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ভারতে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি ফিরোজের সঙ্গে একমত। আইন কানুনতো আছেই, তারমধ্যেও একটা চিহ্নিত লোক, ওয়ারির একটা বাচ্চা মেয়ে ছয় বছর বয়স তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। আমাদেরও ছোট নাতি- নাতনি আছে। এটা হতে পারে না।“
তোফায়েল বলেন, “এখানে দরকার কঠোর আইন করা। আর দ্বিতীয়ত হল, আমি চিনি যে এ এই কাজ করেছে তার আর এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, “চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদ যে কথা বলেছেন, আমি টুপি দাঁড়ি মাথায় নিয়ে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে বলছি, এদের ক্রসফায়ার করলে বেহেস্তে যাওয়া যাবে কোনো অসুবিধা নাই।”