ভোটের তারিখ বদলাবে কি না, জানা যাবে মঙ্গলবার

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ বদলাবে কি না- সেই প্রশ্নে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত জানা যাবে মঙ্গলবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2020, 09:57 AM
Updated : 14 Jan 2020, 09:47 AM

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিষয়টি মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখে।    

রিটকারী আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ আদালতে নিজেই শুনানি করেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক শুনানিতে ছিলেন।

৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। সে অনুযায়ী প্রার্থীরা প্রচারও শুরু করেছেন।

কিন্তু ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা থাকায় ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য আদালতে এই রিট আবেদন করেছেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।

সরস্বতী পূজার ছুটি কবে- তা শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে আদালত জানতে চেয়েছিল আদালত।   

কিন্তু ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক বিভ্রান্তিকর কথা বলায় তাকে তিরস্কার করেন বিচারক।  

তৌহিদুল ইসলাম শুনানিতে বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রাতষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় সব আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে দেখে কমিশন ভোটের দিন ঠিক করে। ঢাকা সিটির জন্য যে ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আগানো বা পেছানো ঠিক হবে না।”

রিটকারী আইনজীবীর অশোক কুমার ঘোষ আদালতে বলেন, সংবিধানের ৮, ১২, ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম পালনের যে মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোর সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।

“৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি দিনের দ্বিতীয় ভাগ থেকে ৩০ জানুয়ারি আধাবেলা সরস্বতী পূজা, যে পূজাটি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে তার কয়েক দিন আগেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে। পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।”

অশোকের রিট আবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ মুসলিম দেশ নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতেই ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হোক।”

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ৩০ জানুয়ারি কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে রুলও চাওয়া হয় রিটে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে রিটে বিবাদী করা হয়।

এর আগে পূজা উদযাপন পরিষদও সরস্বতী পূজার বিষয়টি তুলে ধরে ভোটের দিন পরিবর্তনের অনুরোধ করেছিল ইসির কাছে। তারপর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদও একই অনুরোধ করে। নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মানববন্ধন হয়।

দেশের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকায় স্বরস্বতী পূজার মূল কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছে। এখানে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র পড়েছে, যেখানে প্রতিবছরই সরস্বতী পূজার আয়োজন হয়।

এ পরিস্থিতিতে রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ভোটের তারিখ বদলের নির্দেশ দেবে কি না- তা নিয়ে রোববার দিনভর আলোচনা চলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও বিষয়টি নিয়ে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে দিনশেষে জানানো হয়, মামলা যেহেতু হয়েছে, আদালতের সিদ্ধান্ত দেখেই নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রম নেবে।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনে ভোটের তারিখ এগিয়ে আনতে কিংবা পিছিয়ে দিতে পারে ইসি; কিন্তু সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

৩০ জানুয়ারির পর ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার হলেও এ দিনে ভোটের নজির বাংলাদেশে নেই। তার পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার সময়টা এড়িয়েই ভোটের দিন ঠিক করে ইসি। ফলে ভোট পেছাতে হলে পরীক্ষাও পেছাতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইসির পক্ষ থেকে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আসেনি। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কেউ কথা বলেনি।”

আবার ভোটের তারিখ একদিন এগিয়ে আনলেও পূজার সঙ্কট কাটছে না। পূজা এড়াতে হলে দুদিন এগিয়ে আনতে হবে ভোটের তারিখ।

এদিকে ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ধরে সেদিন ঢাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। আদালত ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সাধারণ ছুটির তারিখও বদলাবে।

আরও খবর