সিটি ভোট পেছনোর নির্দেশনা চেয়ে রিট হাই কোর্টের কার্যতালিকায়

ঢাকা সিটি করপোরেশ নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে করা রিট আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 06:07 PM
Updated : 11 Jan 2020, 06:07 PM

বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাই কোর্ট বেঞ্চে রোববারের কার্যতালিকার ৩৮ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে রিট আবেদনটি।

ঘোষিত তারিখ ৩০ জানুয়ারি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতী পূজা থাকায় আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ রোববার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেছিলেন।

ওই দিন তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি আধাবেলা থেকে ৩০ জানুয়ারি আধাবেলা পর্যন্ত সরস্বতী পূজা, যে পূজাটি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে।

“৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে তার কয়েক দিন আগেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে। পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।”

রিটকারী আইনজীবীর দাবি, সংবিধানের ৮, ১২, ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম পালনের যে মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোর সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ মুসলিম দেশ নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতেই ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হোক।”

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ৩০ জানুয়ারি কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

নির্বাচনী আইন-বিধি অনুযায়ী প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার থেকে ভোটের মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ও ২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ রাখা হয়েছিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গত ৯ জানুয়ারি।

ওই সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, “৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।  আর দুই সিটিতেই ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ইভিএম পরিচালনায় প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে সেনা সদস্য থাকবেন।”

সিইসি তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, আইন সচিব ও স্বারাষ্ট্র সচিবকে আইনি নোটিশ দেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।

সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে দিয়ে নোটিশে তিনি বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের দিন স্বরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগরে ৪০ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। তাদের অনেকেই ভোটার। সুতরাং ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ পেছানো হোক।”

ওই পক্ষ থেকে জবাব না পেয়ে রোববার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।

ভোট পেছাতে জগন্নাথ হলের চিঠি

পূজাকে কেন্দ্র করে ভোট পেছাতে কয়েকটি সংগঠন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এরইমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও চিঠি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল কর্তৃপক্ষ।

তাদের চিঠিতে বলা হয়, “সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত পূজা লগ্ন বা তিথির মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় বিধায় পূজার তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল রয়েছে। এখানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভোটকেন্দ্রও রয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, “ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ আমাদের কাছে যে আবেদন করেছেন তা কমিশনের কাছে পাঠিয়েছি।”

এদিকে সরস্বতী পূজার জন্য ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ পেছাতে কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

গত ৭ জানুয়ারি সংগঠন দুটির প্রতিনিধি দল এ সংক্রান্ত স্মারকলিপি একজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের পৌঁছে দেন।

ওই সময় ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কমিশনের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব। কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

তারিখ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ডাকসুও

স্বরসতী পূজার কারণে নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু।

শনিবার ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের প্রতি এই আহ্বান জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই দিনে সরস্বতী পূজা ও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখরতায় বিঘ্ন ঘটা ও নির্বাচন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সমস্যাসংকুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ এর একটি সুষ্পষ্ট, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুন্দর সমাধান চায়। শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে।”