‘ধর্ষক’ মজনুকে নিয়ে সন্দেহে মান্নাও

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরের পর ‘ধর্ষক’ মজনুকে নিয়ে সন্দেহের কথা বললেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 01:52 PM
Updated : 11 Jan 2020, 01:58 PM

ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না প্রশ্ন করেছেন, “ওই রকমের একটা দুর্বল শরীরের মানুষ একটা মেয়েকে ধরে একা একা ধর্ষণ করতে পারে? আসলে এটা কি সম্ভব?”

তাকে ধরে ‘কাহিনী সাজানো হচ্ছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, তারা আর কোনো ‘জজ মিয়া’ নাটক দেখতে চান না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শ্যাওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে নেমে ধর্ষিত হন। এ খবর প্রকাশের পর ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে তুমুল আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তিন দিনের মাথায় ৮ জানুয়ারি মজনু নামে আনুমানিক ৩০ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে র‌্যাব বলে, ‘মাদকাসক্ত’ এই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষক। ওই ছাত্রীও ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছেন। 

র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, মজনু এক সময় বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদে মজনু পেশা হিসেবে দিনমজুরি ও হকারির কথা বললেও তিনি ‘ছিনতাই, রাহাজানি, চুরির মতো কাজেও’ জড়িত ছিলেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি।

“সে আমাদের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে, সে সিরিয়াল রেপিস্ট। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক মহিলাকেও নানাভাবে ধর্ষণ করেছে,” বলেছেন র‌্যাবের মুখপাত্র।

তবে মজনুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ডাকসুর ভিপি নূর বলেছিলেন, “ধর্ষকের গ্রেপ্তারে অসংখ্য মানুষ আছে যারা প্রশ্ন তুলেছে, এটি আসল ধর্ষক নাকি এটি আরেকটি ‘জজ মিয়া নাটক’। মানুষের যেহেতু কনফিউশন তৈরি হয়েছে, মানুষের যেহেতু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, এই প্রশ্নের সমাধান করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই।”

মজনু নামের ‘মাদকাসক্ত’ এই যুবকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বলে র‌্যাবের ভাষ্য

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে নূরের ওই সন্দেহের প্রতিধ্বনি করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, “মানুষের কাছে প্রশ্ন উঠেছে, যে ধর্ষণ করল তাকে গ্রেপ্তারের পর তার ছবি দেখে, চেহারা দেখে, সামনে দুইটা দাঁত নাই- এ রকমের একটা বিদঘুটে অবস্থা- এই লোকটাই কি সত্যি ধর্ষক? সোশাল মিডিয়াতে প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। সাধারণ যে কাউকে জিজ্ঞাসা করেন, ওই রকমের একটা দুর্বল শরীরের মানুষ একটা মেয়েকে ধরে একা একা ধর্ষণ করতে পারে? কোনো মেয়ে যদি মনে করে আমি ধর্ষণ করতে দেব না, একা কোনো মানুষ, আসলে এটা কি সম্ভব?”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তার ধর্ষককে শনাক্তের খবর প্রকাশ করেছেন জানিয়ে মান্না প্রশ্ন করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলছেন, আমি নিজে গেলাম, দেখলাম, কথা বললাম, সে তো বলছে যে ওকে সে শনাক্ত করেছে, সে চেনে।

“আমি বলি ওই অধ্যাপক কে? উনি কোন দল করেন? কোন দলের সাথে যুক্ত আছেন? দল যদি করেন মিথ্যুকদের দল ওটা। যারা গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের রাতে করে ফেলতে পারে, তাদের দেওয়া সাক্ষী আমি নিতে যাব কেন? শুধু আপনার (সরকারি দল) শিক্ষক দেখা করতে পারল কেন, অন্য দলের কোনো শিক্ষক, ছাত্র, ডাকসুর ভিপি কেন যেতে পারল না? তারপরে এখন কাহিনী বানাচ্ছেন।

“এজন্য বলছি, আমরা নিরাপদ নই। এরা যে কোনো নাটক কখন কী কারণে সাজাচ্ছে, এটা খুবই একটা চিন্তার বিষয়। কোনো জজ মিয়া নাটক দেখতে চাই না।”

ঘটনা ধামাচাপা দিতে অন্য একজনের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আলোচিত নাম জজ মিয়া।২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হন। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। গ্রেনেড হামলার জন্য ওই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তখন আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছিলেন; তদন্ত নিয়েও ওঠে নানা প্রশ্ন।

এক পর্যায়ে নোয়াখালীর এক গ্রাম থেকে জজ মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় এনে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেন, তিনিই এই হামলার হোতা। নির্যাতনের মুখে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন জজ মিয়া।

তবে মামলাকে ‘ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য’ চারদলীয় জোট সরকারের নির্দেশে সিআইডি জজ মিয়াকে নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা করে বলে গণমাধ্যমে উঠে আসে, বেরিয়ে আসে পরের তদন্তেও।

জঙ্গিদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাশের পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে। এই মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা দণ্ডিত হয়েছেন।

পুনরায় কোনো জজ মিয়া নাটক দেখতে চান না জানিয়ে এখন বিএনপির জোটসঙ্গী মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “যেই রাত্রে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে কাক-পক্ষী জানেনি। সেই মেয়েটি বাইরে এসে রিকশায় চড়ে তখন তার গন্তব্যে যাচ্ছে পত্রিকায় পড়েছি। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গেইটগুলোতে একটার পর একটা ছাত্রলীগের জমায়েত কীভাবে হল? যে-ই ছাত্রলীগ গত ১৫-২০ দিন ধরে ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে না তারা পরদিন সকাল বেলা ধর্ষণের প্রতিবাদে মিছিল বের করল, এত বড় সমাজ হিতৈশী ছাত্রলীগকে গত কয়েক বছর ধরে দেখছি না। তাই আমাদের প্রশ্ন।”

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে উদ্দেশে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করবার যে ষড়যন্ত্র করছেন, ছাত্র রাজনীতি র্ধ্বস করবার ষড়যন্ত্র করছেন, ডাকসুর ভিপিসহ সমস্ত ছাত্র নেতাদের যে রকম নির্দয়ভাবে প্রহার করেছেন- সেটা ধামাচাপা দেবার জন্য আবার নতুন নতুন ব্যবস্থা যদি করেন সেটাও মানা হবে না।”