বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে পদযাত্রা’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে তিনি এই সংশয়ের কথা জানান।
নূর বলেন, “ধর্ষকের গ্রেপ্তারে অসংখ্য মানুষ আছে যারা প্রশ্ন তুলেছে, এটি আসল ধর্ষক নাকি এটি আরেকটি ‘জজ মিয়া নাটক’। মানুষের যেহেতু কনফিউশন তৈরি হয়েছে, মানুষের যেহেতু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, এই প্রশ্নের সমাধান করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হন। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। গ্রেনেড হামলার জন্য ওই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তখন আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছিলেন; তদন্ত নিয়েও ওঠে নানা প্রশ্ন।
হামলার পরের বছর ৯ জুন নোয়াখালীর এক গ্রাম থেকে জজ মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় এনে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেন, তিনিই এই হামলার হোতা। নির্যাতনের মুখে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন জজ মিয়া।
জঙ্গিদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাশের পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে। এই মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা দণ্ডিত হয়েছেন।
এদিকে গত রোববার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে নেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার পর ধর্ষকের গ্রেপ্তার দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তার সহপাঠীরা। সমাজের বিভিন্ন মহলও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
বুধবার মজনু নামের আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করে র্যাব বলছে, ‘মাদকাসক্ত’ এই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষক। ওই ছাত্রীও ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছেন।
র্যাব বলছে, মজনু এক সময় বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
জিজ্ঞাসাবাদে মজনু পেশা হিসেবে দিনমজুরি ও হকারির কথা বললেও তিনি ‘ছিনতাই, রাহাজানি, চুরির মত কাজেও’ জড়িত ছিলেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
“সে আমাদের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে, সে সিরিয়াল রেপিস্ট। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক মহিলাকেও নানাভাবে ধর্ষণ করেছে,” বলেছেন র্যাবের মুখপাত্র।
তবে র্যাবের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর।
তিনি বলেন, “এই ধর্ষক যে প্রকৃত ধর্ষক সেটি প্রমাণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।”
শুধু দুই-একটি ঘটনার প্রতিবাদ নয়, নারী নিপীড়নসহ সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে পরে সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেন নূর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা।