ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখতে আইন সংশোধন চায় ঢাবি শিক্ষক সমিতি

আইন সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজার বিধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 09:02 AM
Updated : 8 Jan 2020, 09:05 AM

ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সংহতি জানান।

গত রোববার কুর্মিটোলা এলাকায় এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকে ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ফুঁসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মজনু নামে এক সন্দেহভাজন যুবককে আটকের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

বুধবারের মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংস্কার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, “একজন রাজাকার ও ধর্ষকের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। রাজাকারের যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ফাঁসি হয়, তাহলে ধর্ষকেরও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনতিবিলম্বে একটি গোলটেবিল বৈঠক করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কোন জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সে জায়গাটা চিহ্নিত করবে। রাষ্ট্র সেটিকে গ্রহণ করে এ সমাজকে যারা নষ্ট করছে, এ সমাজকে যারা অগ্রসর হতে দিচ্ছে না তাদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিচার ও আইন ব্যবস্থাকে সংস্কার করবে বলে আশা করি।”

আটক ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি যেন সর্বশেষ ঘটনা হয়। আমরা চাই এমন একটি সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে যার মাধ্যমে নারীর জন্য এ শহর হবে নিরাপদ। এদেশের সকল জনপদ হবে নিরাপদ।”

ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজার পক্ষে নিজের অবস্থান জানান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানও।

তিনি বলেন, “আইনি কতগুলো কাঠামো পরিকাঠামো আছে কিন্তু আমাদের দাবি হবে, আইনি কাঠামোর মধ্যে যদি কোথাও ঘাটতিও থাকে সেক্ষেত্রে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা উদ্যোগ নেন, এই ধরনের পাশবিকতা যখন সমাজে সংঘটিত হয় তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যেটি আছে, সেটির মনে হয় প্রবিধান রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।”

ছাত্রী ধর্ষণের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা যেন আর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সরকারকে অনুরোধ করব, আপনারা সকল ধরনের ব্যবস্থা, সকল ধরনের প্রক্রিয়া, সকল ধরনের আইনি কাঠামো-অবকাঠামো তৈরি করুন, যার মাধ্যমে আর কোনো ঘটনা যাতে এই জাতিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কোন সদস্যকে আর কখনো অবলোকন করতে না হয়।”

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকার এবং সংশ্লিষ্টজনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় আমরা সবসময় লক্ষ্য করি, একসময় না একসময় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। শুধু বেরিয়ে এসেই ক্ষান্ত হয়নি, যাকে নির্যাতন করা হয়েছে তাকে এবং তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে আবার হুমকিও দেওয়া হয়।”

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক প্রক্টর আমজাদ আলী, সিন্ডিকেট সদস্য হুমায়ুন কবির, ইতিহাস বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক শরিফুল্লাহ ভূইয়া, গণিতের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবা নাসরিন প্রমুখ।