ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণে একজন গ্রেপ্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2020, 08:22 PM
Updated : 8 Jan 2020, 03:03 AM

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম মঙ্গলবার গভীর রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় সকালে গাজীপুর থেকে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।শিক্ষার্থীর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী ধর্ষকের চেহারার একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেছে।

“আমরা এখন অভিযান শুরু করব। আশা করা যায় রাতেই একটি ফলাফল পাওয়া যাবে। কিছু একটা ভালো খবর দেওয়া যাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে রোববার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে নেমে ধর্ষিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পরপরই তিনি আক্রান্ত হন। মুখ চেপে ধরে তাকে তুলে সড়কের পাশে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।

কয়েক ঘণ্টা পর চেতনা ফিরে পেয়ে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যান। রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরদিন ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা।

ওই মামলায় বলা হয়েছে, ধর্ষক যুবকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা। স্বাস্থ্য মাঝারি। ঘটনার সময় তার চুল ছোট ছোট ছিল।

“স্যান্ডেল পরা এই যুবকের পরনে পুরাতন জিন্সের প্যান্ট ছিল। গায়ে ময়লা কালো রংয়ের ফুলহাতা জ্যাকেট ছিল।”

কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাস্থল থেকে সোমবার দুপুরে আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি।

ঘটনার বিবরণে মামলায় বলা হয়, ওই ছাত্রী বাস থেকে নেমে আর্মি গলফ ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে ধর্ষক যুবক পেছন দিক থেকে তার গলা ধরে ফুটপাতের পাশে মাটিতে ফেলে দিয়ে গলা চেপে ধরে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করে। পরে জ্ঞান ফিরলে ওই ছাত্রীকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। এ সময় তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে।

“ধর্ষক পরে শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন, হাত ঘড়ি, একটি ব্যাগ, নগদ দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।”

এদিকে সহপাঠী ধর্ষিত হওয়ার খবর প্রকাশের পর রোববার রাত থেকে ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিন বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচিতে দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।

দুপুরে পুলিশ প্রধান মো. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ধর্ষককে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশের সব বিভাগ। এখন তাদের অগ্রাধিকারমূলক কাজের তালিকায় সবার উপরে আছে এই ঘটনা। অচিরেই ধর্ষক গ্রেপ্তার হবে বলে তিনি আশাবাদী।

ক্যান্টনমেন্ট থানার এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে র‌্যাবসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগও তদন্ত চালাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ধর্ষকের শারীরিক গঠনের যে বিবরণ পাওয়া গেছে তার পাশাপাশি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান যেমন গলফ গার্ডেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের কয়েকটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন।

“এসব সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সন্দেহভাজন পথচারীদের শনাক্ত করা। কেউ ওই শিক্ষার্থীকে আগে থেকে অনুসরণ করেছিল কি না বা ঘটনার পরে ধর্ষক চলে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা।”

কাউকে সন্দেহ হলে তার শারীরিক গঠন মামলায় দেওয়া বিবরণের সঙ্গে মেলানো হবে এবং পরে ওই শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে তার কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম বলেছেন, তারা যাকে গ্রেপ্তার করেছেন তার ছবি তুলে নিয়ে ওই ছাত্রীকে দেখানো হয়েছে।

“তবে তিনি এখনও হ্যাঁ বা না কিছু বলেননি।”