ধর্ষণকারী যুবক, ছিলেন একাই: পুলিশ

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের পাশের ফুটপাত থেকে টেনে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণকারী যুবক একাই ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2020, 07:16 PM
Updated : 6 Jan 2020, 07:18 PM

ওই তরুণীর বাবার করা মামলায়ও একজনকে আসামি করা হয়েছে। কে সেই যুবক, তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ; মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এই ধর্ষণের ঘটনার পর সোমবার দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবরোধে ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস থেকে এক বান্ধবীর বাসায় যেতে রোববার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা স্টপেজে নামার পর ফুটপাত ধরে চলার সময় তুলে সড়কের পাশে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে।

সহপাঠীরা জানান, শেওড়ায় তার এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে উঠেছিলেন ওই তরুণী। ভুল করে এক স্টপেজ আগে কুর্মিটোলায় নেমে পড়ার পর ফুটপাথ ধরে সামনে এগুচ্ছিলেন তিনি।

ওই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, “সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই অজ্ঞাতপরিচয় কোনো লোক তার মুখ চেপে ধরে এবং পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।”

ওই তরুণী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। তাকে পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাস্থল থেকে সোমবার দুপুরে আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি।

ওই তরুণী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছেন, ধর্ষণকারীর বয়স ছিল ২৫-৩০ বছরের মতো। ওই ব্যক্তি একাই ছিল। ধরে নেওয়ার সময় তিনি চিৎকার করলেও এলাকাটি নিরিবিলি হওয়ায় কেউ শোনেনি।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তার বাবা-মা’র সামনেই ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

“তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একজনই তাকে জোর করে ধরে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে।”

সোমবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে থেকে শেওড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের পাশে কোনো দোকানপাট কিংবা মানুষের বিচরণ নেই। এর মধ্যে কুর্মিটোলা থেকে আর্মি গলফ ক্লাবের প্রবেশ মুখ পর্যন্ত প্রায় তিনশ (তিন মিনিট হাঁটা দূরত্ব) ফুটপাতের পাশ কৃত্রিম ঝোপ ঝাড়ে ভরা।

দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণে ফুটপাত থেকে ঝোপের ভেতরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ব্যস্ত সড়কে একের পর এক গাড়ি ছুটতে থাকায় উচ্চ শব্দের কারণে ঝোপের ভেতরে চিৎকার করলেও তা কারও শুনতে পাওয়া কঠিন।

কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কের এই স্থান ধরে সামনে এগোলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ধর্ষণের পর চেতনা হারিয়ে ফেলেছিলেন ওই তরুণী। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণকারীর আঘাতের চিহ্নও পেয়েছেন চিকিৎসকরা। তার গলা টিপে ধরা হয়েছিল বলেও জানান তারা।

চেতনা ফিরে পাওয়ার পর ওই তরুণী কিছুটা পথ হেঁটে, এরপর রিকশায় চেপে বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন।

ঘটনাস্থল থেকে সোমবার পুলিশ তার পরনের কাপড় উদ্ধার করে। ওই কাপড় ফেলে রেখে তার ব্যাগে থাকা আরেক সেট কাপড় পরে ওই তরুণী বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানান কামরুজ্জামান।

নীরব এই এলাকায় ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগেও ঘটার কথা স্থানীয়রা জানালেও সেখানে অপরাধমূলক ঘটনার খুব বেশি অভিযোগ নেই বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা।

হাসপাতালের অদূরে যেখানে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। হাসপাতালের সামনে বাস স্টপেজ রয়েছে। সেই বাসের লাইনম্যানদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে পুলিশ।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী সাহান হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা ঘটনাস্থল থেকে প্রয়োজনীয় ছয়টি আলামত জব্দ করেছেন। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে।   

অপরাধীকে চিহ্নিত করতে নির্যাতিত তরুণীর কাছ থেকে আরও তথ্য পেতে চাইছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, তারা অপরাধীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেননি, তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

“ভিকটিমের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে পারলে তা তদন্তে সহায়ক হবে। তবে কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে বর্তমান সেভাবে কথা বলা যাচ্ছে না।”

কুর্মিটোলায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ধর্ষিত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই শিক্ষার্থী শঙ্কামুক্ত, কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজানান, মামলাটি ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারপরও থানা পুলিশ তদন্ত করছে।

“আমরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। হয়ত ফলাফল শিগগিরই পাওয়া যাবে।”