এই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে দেড় হাজারটি; প্রাণহানি বেড়েছে ৭৮৮ জন।
গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার খবর এবং সংগঠনের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো তথ্য সন্নিবেশ করে তৈরি প্রতিবেদন শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
২০১৭ সালে দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে আইন সংশোধনসহ নানা পদক্ষেপের মধ্যেও সড়ক নিরাপত্তাহীনতা বাড়ার চিত্রই এসেছে নিসচার প্রতিবেদনে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “২০১৭ সালের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর নানা উদ্যোগ নেওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।”
২০১৮ সালের তুলনায় ১ হাজার ৫৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে ২০১৯ সালে। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে ৭৮৮ জন মানুষ বেশি মারা গেছেন।
২০১৯ সালের মোট মৃত্যুর ৮৭১টি হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশ।
তবে নিহতের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে আহতের সংখ্যা। ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ০৮ জন আহত হয়েছিলেন, ২০১৯ সালে আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৩ জন।
ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করেন, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসন থেকে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে নিয়মিত প্রতিবেদন দেওয়া হয় না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
এক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা সঠিক ও নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, এটি করার দায়িত্ব ছিল সরকোরের। এজন্য আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি দুর্ঘটনা অনুসন্ধান সেল গঠন করে প্রতিবছরের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য জাতির কাছে তুলে ধরার অনুরোধ করছি। যাতে সঠিক ও নিখুঁত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সবাই জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালে ১৬২টি রেল দুর্ঘটনায় ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৪৭ জন। ৩০টি নৌ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৪ জন, আহত হয়েছেন ১৫৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
নিচসা সড়কে দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী করেছে ট্রাককে। মোট ১০৯৮টি দুর্ঘটনার জন্য ট্রাক দায়ী বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়া মোটরসাইকেল ১০৩৩টি, বাস ৯৯২টি, কভার্ড ভ্যান ১৬০টি, মাইক্রোবাস ১৫৮টি, নসিমন ৮৩টি, প্রাইভেটকার ৭৯টি এবং পিকআপ, অটোরিকশা, ভ্যান এবং অন্যান্য যানবাহন ২ হাজার ১৭৮টি দুর্ঘটনায় দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বড় শহর ও মহাসড়কে। ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটোরিকশার মতো যানবাহন এসব দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী বলে নিসচার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।
ধীরগতির এসব যান এখনও মহাসড়কে চলাচল করে দূরপাল্লার বড় গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটালেও তা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের উদ্যোগ নেই বলে নিচসার অভিযোগ।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে নিসচা। এছাড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে প্রচার, স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা বাস্তবায়ন, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগের সুপারিশ করেছে নিসচা।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আমরা জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক, গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
“আমরা মনে করি নিরাপদ সড়ক চাইর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও যদি এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হত, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যেত।”