‘বিয়ার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাওয়া গেলে কেউ মাদকে ঝুঁকবে না’

বাংলাদেশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতেও স্বল্প মাত্রার অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় ‘বিয়ার’ পাওয়া গেলে কেউ মাদকে ঝুঁকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2020, 05:43 PM
Updated : 2 Jan 2020, 05:51 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

এই অনুষ্ঠানে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধে এ সংক্রান্ত তথ্য ও খবর জানাতে বা জানতে হটলাইন সেবা উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। 

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১৯ সালে ২৭ হাজার ৯৮৩ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ২৫ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ বছর ৫০টি বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।”

আলোচনা সভায় অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, “সরকারিভাবে জরিপ করা না হলেও বিভিন্ন বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত।“

উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের এই সদস্য বলেন, “এদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। মাদকাসক্তদের ১৪ লাখ পথশিশু।”

মাদকাসক্তি নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে পরামর্শ দেন বিগত সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, “বিয়ার-ড্রিংকস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সহজেই পাওয়া গেলে কেউ মাদকে ঝুঁকবে না।”

ডা. অরূপ রতন বলেন, পথশিশুদের ৪৪ শতাংশ এবং চালকদের মধ্যে ৩০ শতাংশ চালক মাদকাসক্ত।

“মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।”

নারীরাও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ জন নারী।”

দন্ত্যরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ রতন বলেন, “যারা মাদকাসক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ধূমপায়ী ৯৮ শতাংশ। তাই তামাকদ্রব্য আইনটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যাবে।”

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৫৭ হাজার ৫৬০টি মাদক বিরোধী অভিযানে ১৫ হাজার ৭৪২টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৪৮ জনকে।

এসব অভিযানে আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১২টি ইয়াবা, প্রায় সাড়ে ৯ কেজি হিরোইন, দুই হাজার ৬৫৬ কেজি গাঁজা, ২২ হাজার ৪৫০ বোতল ফেন্সিডিল ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ-বিয়ার।

‘মাদককে রুখব, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব’ প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “কিছু দিন আগেও আমাদের লোকবল ঘাটতি ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা তিন হাজার ৩৬০ জন।”

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, “দেশে ২৩ জেলায় কোনো নিরাময় কেন্দ্র নাই। অচিরেই সেসব জেলায় নিরাময় কেন্দ্র হবে।”

মাদকের চাহিদা কমানো ও মাদক মামলার জট দ্রুত নিষ্পত্তিতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

আলোচনা সভার আগে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের চত্বরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী মাদকবিরোধী গণসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

০১৯০৮৮৮৮৮৮৮ নম্বরে ফোন করে যে কোনো জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা যাবে এবং মাদকের তথ্য নেওয়া ও দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।