আসছে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ, প্রস্তুতি জানালো সরকার

চলতি জানুয়ারি মাসে সারা দেশে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2020, 07:01 AM
Updated : 2 Jan 2020, 09:19 AM

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার জানান, ৬ জানুয়ারি পর একটি এবং মাসের শেষ সপ্তাহে আরেকটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আগে জানুয়ারি মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিস্তারিত জানান অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন।

তিনি বলেন, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে- বছরের প্রথম মাসের প্রথমার্ধেই দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত হবে। গতকাল ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া দেশের সব স্থানেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকাল এ বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে।”

আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রা আরও কমে যাবে জানিয়ে সামছুদ্দিন বলেন, “জানুয়ারি মাসে আরও দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোতে কনকনে শীত অনুভূত হবে।

“আগামী ৩, ৪, ও ৫ জানুয়ারি বৃষ্টিপাত হবে। বৃষ্টিপাত হওয়ার পর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নামতে শুরু করবে এবং শৈত্যপ্রবাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান থাকবে। গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে।”

রাতের তাপমাত্র বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে।

সামছুদ্দিন বলেন, “রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি অঞ্চল বাঘাইছড়ি ও এর আশেপাশে শীতের তীব্রতা হবে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।”

গত ডিসেম্বরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। জানুয়ারিতেও সেখানে একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক।

এবার তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা দেখছেন কি না- এ প্রশ্নে সামছুদ্দিন বলেন, গত বছর রেকর্ডে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। এবারের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আরও সপ্তাহখানেক পরে হয়ত বোঝা যাবে।

“ডিসেম্বরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল, ডিসেম্বরের শেষ দিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সূর্যের আলো কম থাকায় শীতের তীব্রতা প্রচণ্ড ছিল। তাপমাত্রার মাপকাঠিতে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রিকে হয়ত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলেছি, কিন্তু সূর্যের আলো কম থাকায় ও কোথাও কোথাও কনকনে হিমেল হাওয়া থাকায় শীতের তীব্রতা সারাদেশেই প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে তখন।”

ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে পর পর দুই দফা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। রোববার সকালে তেঁতুলিয়ায় থার্মোমিটারের পারদ নেমে যায় ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সারা দেশে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঢাকায় ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় শুক্রবার থেকে হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।

শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার কুয়াশা থাকতে পারে।

‘কেউ যেন শীতে কষ্ট না পায়’

শৈত্যপ্রবাহের সময় কেউ যাতে শীতে কষ্ট না সরকার সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলছেন, এটা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, অক্টোবরে শীতের পূর্বাভাস পাওয়ার পর প্রত্যেক জেলায় শীতবস্ত্র পাঠিয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

“ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৮০০টি কম্বল বরাদ্দ দিয়েছি। আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে ৬৪ জেলার জন্য ২৪ লাখ ৬৯ হাজার ১০০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

শীত ও শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পর শীতার্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শীতবস্ত্র কিনতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র কিনতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ- এই ২০ জেলায় ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আর শিশুদের জন্য খাবার কিনতে ওই ২০ জেলায় ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার তথা সংবাদ সম্মেলনে জানান এনামুর।

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় ২ হাজার করে মোট ১৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের কার্টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চলে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আগামী ১১ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চলে সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

অন্যদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসীন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।