মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে পঞ্চমে কমল পাসের হার

উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনায় এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার কমেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2019, 01:45 PM
Updated : 31 Dec 2019, 02:44 PM

প্রাথমিক সমাপনীতে এ বছর ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

গতবার প্রাথমিকে ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল।

কেন পাসের হার কমল- সেই প্রশ্নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, “এতদিন যে উপজেলার খাতা সেই উপজেলায় মূল্যায়ন করা হত। এবার আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে হয়ত কিছুটা কমতে পারে।”

এবার এক উপজেলার উত্তরপত্র অন্য উপজেলায় পাঠিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সার্বিক ফলাফলে পাসের হারের পাশাপাশি এবার পঞ্চমের সমাপনীতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মঙ্গলবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন। পরে দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সব বছর তো পাসের হার এক রকম থাকবে না। এবার আমরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা নিয়েছি, পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি করতে দিইনি, ইত্যাদি কারণে হয়ত পরীক্ষা সঠিকভাবে হয়েছে। কিছুটা সুন্দর মূল্যায়ন হয়েছে হয়তোবা, এটাই হয়তো কারণ।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেন, পাসের হার প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে বাড়বে না।

“তাহলে তো ১০০ ক্রস করে যাবে। কখনও কমবে, কখনও বাড়বে। প্রশ্ন হয়তো এবার সেভাবেই হয়েছে, যার ফলে পাস কমে এসেছে। এমসিকিউ তুলে দেওয়া হয়েছে, এর একটা প্রভাব থাকতে পারে।”

প্রাথমিক সমাপনীতে এতদিন এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকলেও এবার থেকে শতভাগ প্রশ্ন সৃজনশীল পদ্ধতিতে করা হয়েছে।

এমসিকিউ তুলে দিলেও পরীক্ষার সময় না বাড়ানোয় ফলাফলে তার প্রভাব পড়েছে কি না, সেই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি না। আমাদের কোনো কর্মকর্তাও এটা বলেননি যে বাচ্চারা সময় পাচ্ছে না।”

সামনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি না- এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, “প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেননি। আমরাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। আমাদের কাছে অভিভাবকরা বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলেন, তারা আমাদের পরীক্ষাটি তুলে দেওয়ার জন্য বলছেন।

“প্রধানমন্ত্রীর কথা হল- এখানে কোমলমতি শিশুদের একদিকে মেধার বিকাশ, মননশীলতা, ধৈর্য্য, একটা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের যে একটা প্রতিযোগিতা- এটা আমরা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি।

“মায়েরা এত বেশি টানাটানি করে জিপিএ-টিপিয়ে নিয়ে… আমরা চিন্তা করছি পরীক্ষাটা… মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও কথা হল এটার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা, পরীক্ষা রাখা হবে, এই পরীক্ষাটা উনি রাখতে চাচ্ছেন। এটা একটু সহজ করা যায় কীভাবে, যাতে টানা-হেঁচড়া না থাকে।”

যেসব উপজেলায় কম শিক্ষার্থী পাস করেছে তারাও যেন ভালো করতে পারে সে বিষয়ে তাদের ‘মোটিভেট’ করা হবে বলে জানান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।

আর গণশিক্ষা সচিব বলেন, “শাস্তি আরোপের মাধ্যমে কিছু হবে না। আমরা এখন সারাদেশে ৬৬ হাজার স্কুলে শাস্তি আরোপের মাধ্যমে কিছু অ্যাচিভ করতে চাই না। আমরা চাচ্ছি মোটিভেশনের মাধ্যমে কাজটা করতে।

“আমরা হেড মাস্টারদের মোটিভেট করছি, সহকারী শিক্ষকদের মোটিভেট করছি, আমাদের মায়েদের মোটিভেট করছি, আমরা আমাদের প্রশাসনকে মোটিভেট করছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটা অ্যাচিভ করা সম্ভব, কিন্তু শাস্তি আরোপের মাধ্যমে না।”