তাপসের লক্ষ্য নবসূচনা, অংশগ্রহণমূলক ভোটের আশায় আতিক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2019, 08:30 AM
Updated : 31 Dec 2019, 08:30 AM

মনোননপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার দুপুরে স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতার আবেদন জমা দেন তারা। এসময় দুই প্রার্থীর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক থাকলেও তাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি বলে দাবি করেছেন তারা।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আতিক বলেছেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আর ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করার আশা রেখেছেন তাপস।

নবসূচনা করতে চান তাপস

 

বেলা সোয়া ১২টার দিকে গোপীবাগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মননোয়নপত্র জমা দিতে আসেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, তাপসের ভাই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ অনেক কর্মী-সমর্থক ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাপস।

তিনি বলেন, “আশা করি আগামী বছর ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করতে পারব। আমাদের অনেক করণীয় রয়েছে। প্রথমত দীর্ঘদিন ঢাকাবাসী যে বঞ্চিত অবহেলিত নাগরিক সুবিধা থেকে, সেটাকে আমরা মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করব। যদি ঢাকাবাসী আমাকে জয়ী করেন, সেবা করার সুযোগ দেন, ঢাকাবাসীর মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করাই আমার প্রধান কাজ হবে।”

বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে পাশে দেখা যাচ্ছে না- সাংবাদিকদের এই কথার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তম সংগঠন, কেউ এর বাইরে নয়।

“সকলকে নিয়েই আমরা কাজ করব। বিশেষ করে আমি ঢাকাবাসীর পক্ষে সকল সুশীল সমাজ, ঢাকা নিয়ে যারা চিন্তা করেন, নাগরিক সুবিধা নিয়ে যারা চিন্তা করেন, আপামর জনগণ- সবাইকে আমি আহ্বান জানাব এই সুযোগটাই (তাপসের মনোনয়ন) আপনারা কাজে লাগাবেন। আমাকে পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনাদের সেবক হিসেবে নির্বাচিত হলে প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।”

আচরণবিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে একজন প্রার্থীর সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচজন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেন, কিন্তু ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ছিলেন অনেক নেতাকর্মী।

এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন কিনা জানতে চাইলে তিনবারের সাংসদ তাপস বলেন, বিভিন্ন কাউন্সিলর ও মেয়রসহ সবাইকে একই সময়ে জমা দেওয়ার (মনোনয়নপত্র) সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে হয়তো কিছু মানুষের সমাগম হয়েছে।

“আমরা কিন্তু আচরণবিধি মেনেই আমাদের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আমরা সবসময় চেষ্টা করব নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়। আমি আশা করব ঢাকাবাসী যেন স্বতঃস্ফুর্তভাবে এই নির্বাচনে ভোট দেয়।”

নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রসঙ্গে মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।

“তারা (ভোটাররা) আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করে রেখেছেন। আমি সুযোগ পেয়েছি তাদের সেবা করার। তারাসহ ঢাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ চেয়েই মেয়র পদে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশা করি আমার দক্ষতা, যোগ্যতা, পূর্বের অভিজ্ঞতা ও কাজকে বিচার বিশ্লেষণ করেই লোকজন আমাকে সুযোগ দিবেন।”

সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।

আতিকের আশা অংশগ্রহণমূলক ভোট

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনের (ইটিই) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন বেলা সোয়া ১২টার দিকে। এ সময় নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙ্গে আতিকের সাথে কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন পাঁচজনের বেশি সমর্থক। ভবনের বাইরেও ছিল কর্মী-সমর্থকদের বিশাল বহর।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আচরণবিধি লঙ্ঘণের বিষয়ে এক প্রশ্নে আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো শোডাউন করে আসিনি। বাইরে যখন তা দেখেছি, সাথে সাথে বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া এখানে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও এসেছেন। তাদের মধ্যেই আমাকে মনোননয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে।”

নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কেউ হারবে, কেউ জিতবে, এটাই বাস্তবতা। আমি এর আগে বিজিএমইএ নির্বাচন করেছি। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে ইলেকশন বর্জন করি নাই।”

বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলে অভিযোগ করে।

এ প্রসঙ্গে আতিক বলেন, “এক দল বললে কিন্তু হবে না, সবাই মিলে বলতে হবে। কেউ যদি প্রথম থেকে বলে যে আমরা মাঠে থাকতে পারব না, এটি ওনারা কিভাবে বলে? এটি আমার প্রশ্ন।”

পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে সবার সহযোগিতায় ডেঙ্গু নির্মূল করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে ক্যাসিনোবাজ কাউন্সিলরদের কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আতিক।

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উত্তরের সাবেক মেয়র বলেন, “জনগণের ভোটেই আমরা জিতব। নৌকার কোনো ব্যাক-গিয়ার নাই। নৌকা এগিয়ে চলবে। আমার বিশ্বাস নির্বাচনে জয়ী হব।”