ঢাকায় পৌষের শীতে ভোটের উত্তাপ

মধ্য পৌষের কনকনে শীতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বছরের শেষ দিনে প্রধান দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 04:18 PM
Updated : 30 Dec 2019, 06:30 PM

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়ন সংগ্রহ এবং কাউন্সিলদের ব্যাপক আগ্রহের মধ্যে ঢাকা মহানগরে ভোটের আমেজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

নতুন বছরের শুরুতে রাজনীতির মাঠও সরগরম হয়েছে। দলীয় কার্যালয় ও উত্তর-দক্ষিণে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এখন আগ্রহী প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।

মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে অধিকাংশ প্রার্থী আসবেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এ জন্য মহড়া, মিছিল, শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপরতা দেখাচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারাও।

উৎসবের আমেজ দেখাতে গিয়ে কোনোভাবেই যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইসি কর্মকর্তারা।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনটি পদে ১০১৫টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আগ্রহীরা। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৭৭টি মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে।

তবে এর মধ্যে মাত্র ৭৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেন জানান, এ পর্যন্ত তিনটি পদে ১২৪৫টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৪৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৯০ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। জমা দিয়েছেন মাত্র ৬৬ জন।

উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ১৮টি এবং দক্ষিণের ৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড হওয়ার পর প্রার্থী সংখ্যাও বেড়েছে।

তবে দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি তদারকিতে কাগজে কলমে মাঠে রয়েছে নির্বাহী হাকিম। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা পড়বে আইন-বিধির ঘেরাটোপে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হলেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নামবে প্রচারণায়।

আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা চান ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, “আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার ইতোমধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে থাকছে নির্বাহী হাকিমরা। মনোনয়নপত্র জমা দিতে কোনো গাড়িবহর-শোডাউন ও মিছিল করা যাবে না; এ সময় ৫ জনের বেশি লোক আনা যাবে না। প্রার্থী ও তার পক্ষে সব সমর্থকদের আচরণবিধি মানার আহ্বান জানাই।”

সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের আশপাশে শোডাউন ও বহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসতে দেখা গেছে। নির্বাচন ভবনের সামনে ট্রাকে করে লোক জমায়েত করতে দেখা গেছে সমর্থকদের। প্রার্থীর সাথে আসা কর্মী-সমর্থকদের সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, এসব দেখভাল করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। রিটার্নিং অফিসারারের কার্যালয়ে প্রবেশের পথেই অতিরিক্ত মানুষজনের আসা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা থাকবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

উত্তর সিটিতে আগ্রহী ১০ জন

আতিকুল ইসলাম- আওয়ামী লীগ

তাবিথ আউয়াল- বিএনপি

জিএম কামরুল ইসলাম- জাতীয় পার্টি

আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল- সিপিবি

কাজী মো. শহীদুল্লাহ- গণফ্রন্ট

শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ- ইসলামী আন্দোলন

স্বাধীন আক্তার আইরিন- স্বতন্ত্র

সালাউদ্দিন মাহমুদ- আওয়ামী লীগ

শাহীন খান- পিডিপি (জমা দিয়েছেন)

মো. আনিসুর রহমান দেওয়ার- এনপিপি

দক্ষিণে আগ্রহী ৮ জন

শেখ ফজলে নূর তাপস- আওয়ামী লীগ

ইশরাক হোসেন- বিএনপি

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন- জাতীয় পার্টি

হাজী সেলিম- আওয়ামী লীগ

মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা- বাংলাদেশ কংগ্রেস (জমা দিয়েছেন)

মো. আবদুর রহমান- ইসলামী আন্দোলন (জমা দিয়েছেন)

মো. বাহরানে সুলতান বাহার-পিডিপি

আব্দুস সামাদ সুজন- স্বতন্ত্র

ব্যাংক খোলা

মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আগ্রহী প্রার্থীদের সুবিধার্থে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার সব তফসিল ব্যাংক খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।

প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাংক ড্রাফটসহ আর্থিক তথ্যাদি পূরণের সুবিধার্থে  এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মেয়র পদে ১৮টি, কাউন্সিলর পদে ২২৪২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে (ইটিআই) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এবং গোপীবাগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে। সেখানেই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন প্রার্থীরা।

এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, পিডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, এনপিপি, সিপিবি ও গণফ্রন্ট এর আগ্রহীরা ও দুই জন স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র নিলেও শেষ দিনে কারা জমা দিচ্ছেন তাই দেখার বিষয়।

পাঁচ বছর আগে (২৮ এপ্রিল ২০১৫) প্রার্থী সংখ্যা

# ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৮১ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৯ প্রার্থী ছিলেন।

# দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯০ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবার ভোটার ও ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ৩০ লাখ ভোটার এবং দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ ভোটার।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রেখেই ঢাকায় স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি।

তবে তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, “ভোট নিরপেক্ষ হবে; সবাই যেন নির্বাচনে আসেন। নির্বাচন সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সবাইকে আসার জন্য বলছি। আশা করি উৎসবমুখর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।”

এবার দলগুলোর পাশাপাশি ভোটারদেরও কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান সিইসি নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, “আপনারা নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন। আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নেব। আমরা আহ্বান করি, আপনারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন।”