বাম জোটের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল লাঠিপেটা করে পণ্ড করেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 08:00 AM
Updated : 30 Dec 2019, 04:45 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের অংশ হিসেবে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশের পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হন জোটের নেতা-কর্মীরা।

পথে কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে তারা এগিয়ে যান। বেলা ১টার দিকে মৎস্য ভবনের সামনে আবার বাধার মুখে পড়েন বাম জোটের নেতা-কর্মীরা। তারা সেখানকার ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

এক পর্যায়ে মিছিল থেকে ইঁটপাটকেল ছুড়ে মারার অভিযোগ করে পুলিশ সদস্যরা বাম জোটের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। এসময় মৎস্য ভবন মোড় থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যান চলাচল প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ থাকে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সিপিবি নেতা ক্বাফী রতন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের হামলায় জোটের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীসহ ২৫-২৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।

এবিষয়ে ডিএমপি রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের (বাম জোটের নেতাদের) অনুরোধ করেছিলাম যেন ব্যারিকেড না ভাঙে। কিন্তু তাদের নেতা-কর্মীরা কথা শোনেননি। তারা প্ল্যাকার্ডের সঙ্গে থাকা লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে।

“পরে আমাদের পাঁচ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন দুজন। আমরা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। পরে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।”

রমনা থানার ওসি মনিরুল  ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চার পাঁচ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

মিছিল থেকে যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আনোয়ার সজ্জন ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জুবায়ের আহম্মেদ সজল, ক্ষেতমজুর সমিতির কর্মী ওয়াহিদুজ্জামান ও বাসদের কর্মী তামিমকে পুলিশ আটক করেছে ক্বাফী রতন জানান।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৮ আসনে অভাবনীয় জয় পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে বাম জোট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও ওই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলে।

নির্বাচনের বছরপূর্তির দিনটি ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে সোমবার জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি করা হয় বাম জোটের পক্ষ থেকে।

সে অনুযায়ী সোমবার সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। সেখানে তারা স্লোগান ধরেন- ‘স্বৈরাচারের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'।সমাবেশ শেষে বাম জোটের নেতাদের কালো পতাকা মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাম গণতান্ত্রিক জোটের নতুন সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘ভুয়া নির্বাচনের’ মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় বসে আছে, তাকে ভুয়া সরকার ছাড়া আর কিছু বলে আখ্যা দেওয়া যায় না। ‘গণআন্দোলনের’ মুখে সরকারের পতন ঘটিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ‘বিকল্প সরকার’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সাইফুল হক বলেন, বিরোধী দলকে দমন করতে সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস লেলিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে; নৈতিক পরাজয় হয়েছে। চরমপন্থী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে এ দল।

বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বিশ্ববেহায়া’ আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোই এখন প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য। ক্ষমতার মসনদ থেকে যত দ্রুত তাদের নামানো যাবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।