ভিডিওতে পাহাড়ি তরুণীকে হেনস্তা করে সমালোচিত ইউটিউবার

ভিডিও সাক্ষাৎকারে বান্দরবানের এক তরুণীকে একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন একজন ইউটিউবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2019, 05:48 PM
Updated : 30 Dec 2019, 10:01 AM

জাতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে হৃদয় হাসান নামের ওই তরুণকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

হৃদয়ের ওই ভিডিও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিজানুর মিলকি লিখেছেন, “ধৈর্য্য ধরে রাখতে পাচ্ছি না, সামনে পাইলে যে ভাবেই হোক একটা থাপ্পড় হলেও দিতাম।”

লোকমান হোসেন মন্তব্য করেন, “আমি একজন বাঙালি হয়ে নিতান্তই লজ্জিত। আপনারা পারলে আইসিটি আইনে মামলা করে দেন... আইডির উপর। একবার ডিম থেরাপি খাইলে এ জীবনে আর এগুলো করবে না।”

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ লিখেছেন, “ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। কোনো জাতি গোত্রকে কটাক্ষ করা যাবে না কোনোভাবেই।”

রাজিব মৃধা লিখেছেন, “দয়া করে বিদ্বেষ ছড়াবেন না। এই ছেলেটা যা করেছে তার দায় শুধু তারই। সমস্ত বাঙালিরাই এমন না।”

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক আইডিতে নিজের তৈরি করা বিভিন্ন ভিডিও আপলোড দিয়ে যাচ্ছেন হৃদয় হাসান। সেখানে বেদে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিত গোষ্ঠীর নারীদের নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তার বেশ কয়েকটি ভিডিওতে এক লাখেরও বেশি ভিউ রয়েছে। তবে এসব ভিডিওর নিচে অধিকাংশ কমেন্টেই দর্শকদের ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ভিডিওতে যার সাক্ষাতকার নেওয়া হচ্ছে- তার নাম, বয়স, প্রেম করেন কি না? কেমন ছেলে বিয়ে করবেন? আমাকে আপনার পছন্দ কি না? আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, বিয়ে করবেন কি না? ফিউচার প্লান কী? চলেন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করি এসব প্রশ্ন করে তাকে বিব্রত করেন তিনি।

এক ভিডিওতে দেখা যায়- বেদে পল্লীতে গিয়ে জোর করে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করছেন হৃদয়। জোর করেই একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে।

এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পরে আরেকটি ভিডিওতে এসে হৃদয় বলেছেন, “বেদে সম্প্রদায় নিজেদের বাইরে কাউকে বিয়ে করে না। সেই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আমি প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে থাকি। আর আমাদের মূল দর্শক হচ্ছে প্রবাসীরা। তাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য এমনটি করে থাকি।

“যারা এ নিয়ে বকাবাজি করে তারা এমনিতেই করে। তাদের বকাবাজি দেখে বসে থাকলে তো আমাদের হবে না। আমাদের কাজের ধারা অনুযায়ী আমরা কাজ করতেই থাকব। যেহেতু টপিক ভাইরাল। তাহলে আলোচনা সমালোচনা হবেই।”

সম্প্রতি ভিডিও নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এভাবে ভিডিও করা উচিত হয়নি। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। এখন আরেকটি ভিডিও করে আমি সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই ইউটিউবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা-পয়সা আয় করার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের ভিডিও তৈরিতে নেমেছেন। এসব করার জন্য তার একটি দলও রয়েছে। তাদের পেছনে নিয়মিত খরচ করতে হয়ে বলেও দাবি করেন হৃদয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হৃদয়ের সঙ্গে থাকা হানিফ নামের এক যুবক বলেন, তিনি আয়-ব্যয় সম্পর্কে ‘কিছুই জানেন না’। কী ভিডিও তৈরি করা হবে তা হৃদয় নিজেই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হৃদয়কে মাঝে মধ্যে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকেন।

হৃদয়ের ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদিবাসীদের নিয়ে এই প্রবণতা অনেক পুরোনো। ভিডিওতে যে কাজটি করা হয়েছে তা অবশ্যই অপরাধ। তার পরিচয়কে টার্গেট করে প্রশ্ন করা হয়েছে।

“আসলে সাধারণ মানুষের এসব নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন স্ব উদ্যোগী হয়ে কিছু করতে পারে। চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরে অন্যরা সতর্ক হবে।”