নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন: মাহবুব তালুকদার

সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে ইসি অনেকটাই অসহায় বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2019, 09:57 AM
Updated : 25 Dec 2019, 09:57 AM

সেজন্য বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন বর্তমান ইসিতে নানা সময়ে ভিন্নমত পোষণের জন্য আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার।

মাহবুব তালুকদার বলেন, “কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ, শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে।

“আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন।”

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের সংস্কার চান, তা স্পষ্ট করেননি সাবেক আমলা মাহবুব তালুকদার।

গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।”

মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দুদিনব্যাপী প্রশিক্ষণে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন মাহবুব তালুকদার।

অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি  সচিব মো. আলমগীরও ছিলেন।

নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনগুলো নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে কাজ করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি; যদিও সিইসি সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আসন্ন দুই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার উপর জোর দিয়েছেন মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “বর্তমান পর্যবেক্ষণে ধারণা হয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সবাই অংশ নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথ সুগম হয় ও অনিয়মের পথ রুদ্ধ হয়।”

ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটারদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ভোটারদের বলি, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রহরণকারীদের উপযুক্ত জবাব দিন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির সঙ্কট ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস।”

বর্তমান ইসির অধীনে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও পরের তিনটি নির্বাচন নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা স্বীকার করেন মাহবুব তালুকদার।

“কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমাদের সফলতা ছিল। কিন্তু বেশি দিন আপনার রূপে আপনি বিভোর থাকা হল না। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি।

“কিন্তু এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে এবার সম্পূর্ণভাবে ইভিএম ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের।

মাহবুব তালুকদার বলেন, “ইভিএম নিয়ে অংশীজনের অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা যদি সফলকাম হতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে।”

সুষ্ঠু ভোটের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্য লাভ করবেন।

“সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই শূন্যসহিষ্ণু নীতি বা ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনারা সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন।

“নির্বাচন ভূলুণ্ঠিত হলে গণতন্ত্রও লুণ্ঠিত হয়ে যায়। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না।”