সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং সাংবাদিকতা পেশার উৎকর্ষ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গঠিত সংগঠনটির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মূল বক্তৃতায় এই প্রত্যয় জানান তিনি।
ছাপানো ও ইন্টারনেট সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ সংবাদ প্রকাশনা ও পরিবেশনার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের সব ধরনের মাধ্যমের সম্পাদকীয় নেতাদের নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে এডিটরস গিল্ড।
সম্পাদকদের সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শনিবার ঢাকার গুলশানের আমারি ঢাকা হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “গত এক বছরে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা আমাদের গঠনতন্ত্রের রূপরেখা তৈরি করতে পেরেছি, সেই সঙ্গে সাংবাদিকতার নৈতিক মানদণ্ডের একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজও এগিয়ে এখন মাঝ পর্যায়ে রয়েছে।
“গত মে মাসে আমাদের প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বোতভাবে কাজ করে যাব। আমরা এক্ষেত্রে কোনোভাবে নতি স্বীকার করব না।”
রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক রাজনীতিক-কূটনীতিকদের নিয়ে গত মে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সংগঠনটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন, সম্পাদকীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং স্বআরোপিত ‘সেন্সরশিপ’ নিরুৎসাহিত করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য।
দীর্ঘসূত্রী প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে এখনও এডিটরস গিল্ডের আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন করতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, সে কারণে বার্ষিক সাধারণ সভা ও বড় পরিসরের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও তা করা সম্ভবপর হয়নি।
“তবে আমরা এত সহজে হতাশ হচ্ছি না, সেই সঙ্গে লক্ষ্যচ্যুতও হচ্ছি না। আমাদের প্রথম লক্ষ্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এরপরই হচ্ছে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা। বলে রাখি, এটা খুব সহজ কাজ নয়। নরওয়েসহ গুটিকয়েক দেশ বাদে বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও এটা সহজ নয়।”
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মন্ত্রী দীপু মনি স্বাধীনতা চর্চার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আপনাদের এই সংগঠন সংবাদপত্র জগৎ বা গণমাধ্যম জগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। আমি রাজনীতির মানুষ হলেও সংবাদপত্রকে খুব বেশি নিজের ভাবি। তার কারণ হচ্ছে যে, বাংলাদেশের খুব বড় একটা সংবাদপত্রের প্রেসের মধ্যে দৌড়ে দৌড়ে আমি বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকে নিজেকে সংবাদপত্র পরিবারের একজন বলে ভাবি।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, “আপনি যেগুলো বললেন, সেগুলোর সঙ্গে নিশ্চয়ই আমরা একমত। দেশকে এগিয়ে যেতে হলে, গণতন্ত্রকে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের মানুষের অধিকার, যেটি আমাদের লক্ষ্য সেগুলোর প্রতিষ্ঠিত করতে হলে যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হয়, তার মধ্যে সংবাদমাধ্যম অন্যতম।
“আমরা একদিকে যেমন স্বাধীনতার কথা বলি, আরেক দিকে দায়িত্বশীলতার কথাটাও এপিঠ-ওপিঠ হতেই হয়। সেটি না থাকলে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত হয়। আমাদের রাজনীতিতে যেমন সবকিছু আছে, গণমাধ্যম জগতেরও সব কিছু আছে। সকল ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ সবই আছে। সবক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে, ভালোকে সামনে নিয়ে আসতে আর মন্দকে দূর করতে। সেক্ষেত্রে সব ভুবনের বাসিন্দাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার কানবার হোসেইন বোর।
যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেন ব্লেকেন ছুটিতে যাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান এডিটরস গিল্ডের সভাপতি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার, ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট ইজাজুর রহমান।
বাংলাদেশে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকটি সংগঠন থাকলেও সেগুলো সব ধরনের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি বলে ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ।
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এডিটরস গিল্ড যাত্রা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ মাসের মধ্যে গঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তৌফিক খালিদী জানান, নয়জনকে নিয়ে এডিটরস গিল্ড যাত্রা শুরু করলেও এখন এর সদস্য সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।
“আরও অনেক আবেদন আমাদের কমিটির বিবেচনায় রয়েছে। আশা করি, অচিরেই আরও কয়েকজনকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে এডিটরস গিল্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক এম মনজুরুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের প্রকাশক ও সম্পাদক আলতামাশ কবির, মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ প্রধান রেজোয়ানুল হক রাজা, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, এশিয়ান এইজের এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী, সরগম সম্পাদক কাজী রওনক হোসেন, দুরন্ত টেলিভিশনের পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী, দেশ টিভির সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল এবং ডট সম্পাদক খান মো. মুস্তাফা খালীদ পলাশ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দীপু মনিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন এডিটরস গিল্ডের সদস্যরা।
গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ের জন্য জুলফিকার রাসেলকে সবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান এডিটরস গিল্ডের সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
এই সংক্রান্ত খবর