রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম নিয়ে মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2019, 07:59 AM
Updated : 17 Dec 2019, 11:57 AM

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে গত রোববার প্রকাশিত ওই তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ‘দুই-একশ’ নামে ভুল হলে সংশোধন করা হবে।

তবে ওই ভুলের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায় অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তালিকা হুবুহু তারা প্রকাশ করেছেন, কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। 

নম্বর সেক্টরে মেজর আবদুল জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীর নাম সরকারের প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় আসায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তপন কুমার চক্রবর্তীর বাবা সুধীর কুমার চক্রবর্তীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু তার মাকেও ‘একাত্তরের রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের’ তালিকায় রেখেছে সরকার।

সরকারি গেজেটভুক্ত, নিয়মিত সম্মানী পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রীর নাম স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বরিশালের মুক্তিযোদ্ধারাও।

এর মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ‘শুধু মুক্তিযোদ্ধাকে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান’ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তপন চক্রবর্তীর মেয়ে বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে বরগুনা, রাজশাহী ও বগুড়া থেকেও। স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দেখে নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, এখনো এই তালিকা সংশোধন করা সম্ভব।

“কে করতে পারে সঠিক ভাবে?ওই সময়কার লোকেরা। তাই তাদের জীবিত অবস্থায় প্রকাশ পাওয়ায় আমি মনে করি,তারা আহত হলেও,কষ্ট পেলেও একটা সংশোধন হওয়ার সুযোগ হয়েছে। যদি এটা ৩০ বছর পর প্রকাশ হত;তাহলে সংশোধন হওয়ার সুযোগ থাকতো না।”

কিছু ভুলের অভিযোগ এলেও রাজাকারের ওই তালিকা বিতর্কিত হয়নি বলেও মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

“অভিযোগ যেহেতু এসেছে... বিতর্কিত হয়ে গেল- এটা বলা যাবে না। এটা দেখতে হবে সংখ্যাটা কতজন? আমার মনে হয়,আমি যতটুকু খবর পাচ্ছি;বরিশাল বিভাগ সম্পর্কেই অভিযোগগুলো পাচ্ছি।”

রাজাকারের নামের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার কারণ জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “প্রথমত এই ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। এর কারণ হলো এই তালিকাটি ১৯৭১ সালের করা। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করেছি।”

মঙ্গলবারও তিনি বলেন,  “আমরা স্বীকার করব না যে আমরা করেছি। এই তালিকা আগেই করে রেখে গেছে। সেখানে কোনো ইল মোটিভ থাকতে পারে। উদ্দেশ্যমূলক... ভাই, যেভাবে আসছে, আমি তো বললাম, আমরা এটায় এডিট করি নাই। আমরা এখানে দাড়ি, কমা, সেমিকোলন… যেভাবে এসেছে; সেটা প্রকাশ করেছি।”

একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই ভুলের জন্য জাতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ বলে কেউ কেউ দাবি করেছেন।

ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “দুঃখ প্রকাশ করার অর্থ যদি আপনি না বোঝেন… আমি কী এটা করেছি? এটা যদি আপনি চ্যালেঞ্জ করেন,তাহলে এসে দেখে যান রেকর্ড।

“আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে যেটা বলছি, সেখানেই থাকেন। তালিকা আমরা তৈরি করি নাই। জাতির দাবি ছিল, তাই প্রকাশ করেছি। আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করি নাই।”

দুঃখ প্রকাশ করা আর ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে ‘কোনো পার্থক্য নাই’ মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “আমি এই কাজ না করেও দায়দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।”

তপন চক্রবর্তীর মেয়ে বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “আমার নাম আসলে আমি যেভাবে কষ্ট পেতাম, উনারাও সেভাবে কষ্ট পেয়েছেন। সেজন্য আমি ব্যথিত। আমিও কষ্ট পেয়েছি, সেটা তো আমি বলেছি।”

ভুলের ঘটনায় তদন্ত হবে কি না জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার সংখ্যার ওপর...যদি ব্যাপক ভাবে অভিযোগ আসে, তাহলে প্রত্যাহার করে নেবো আপনাদের দেখতে হবে যে, অভিযোগের মাত্রটা কত।”