বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কোনো গ্রামে কী প্রভাব ফেলে সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাগেরহাটের রায়েন্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সম্প্রতি এই ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিমূলক মহড়া বা ‘সাইক্লোন সিমুলেশন’ এর আয়োজন করে ।
ব্র্যাকের এ কর্মসূচিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি বা সিপিপি।
ঝড়-সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কমাতে বাড়তি সতর্কতা ও পূর্ব প্রস্তুতির বিকল্প নেই। আর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রশাসনের নানা চেষ্টার পরও অনেক সময় এলাকাবাসীর সচেতনতার অভাবে জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। আর তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা বোঝাতে এই সচেতনতামূলক বিশেষ মহড়ার আয়োজন করে ব্র্যাক।
সে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি আশপাশের লোকজনকে কীভাবে সহায়তা করতে হবে, তা সে শিখেছে এই এই মহড়া থেকে।
“ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমরা মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারব। যারা অসহায় তাদের সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যেতে পারব। আরও বিভিন্ন সাহায্য করতে পারব।”
সাইক্লোন সিমুলেশন দেখতে রায়েন্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে হাজির হয়েছিল আশপাশের শতশত মানুষ। তাদের একজন শরণখোলা সরকারি কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী লিমা।
মহড়া দেখতে এসেছিলেন পাশের গ্রামের রতন হাওলাদার। পেশায় জেলে রতন জানান, সিডরের সময় সাগরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার।
“হঠাৎ দেখি সাগরে পানি উথলাইয়া উডছে। ব্যাপার কি, ঠাণ্ডা গাঙে পানি উথলাইলো ক্যানে। রেডিও ধরিয়্যা হুনি চাইর নাম্বার সিগন্যাল। ঘেরাপির (নোঙর) রশি কাইড্ডা দিয়া ট্রলার নিয়া মেরালিরচর খালে ঢুকছি, এর মধ্যে জঙ্গল তলাই গেছে। গাছে রশি বাইন্ধা আছিলাম। আমাগের ট্রলার ডুবে নাই। সহালে বাড়ি ফির্যা দেহি বাড়িঘর নাই। পরে পরিবার খুইজ্জ্যা পাইছি।”
রতন জানান, সিডরের আগে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তারা অনেকটাই উদাসীন ছিলেন। তবে এখন তারা অনেকটা সচেতন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মসূচি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াচ্ছে তাদের।
মহড়ায় উপস্থিত রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, এই মহড়া তাদের জন্য, যারা সিডর দেখেনি।
“আমরা যে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় বসবাস করি এটা তারা মনে ধারণ করল। এটা মেনে নিয়ে কীভাবে এই দুর্যোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে। দুর্যোগের সময় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এটা কাজে আসবে বলেই আমি মনে করি।”
তিনি বলেন, “এই মহড়াকে বিনোদন হিসেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এটাকে কীভাবে প্রয়োগ করে বিপদ কমানো যায় সেটা মনে রাখতে হবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ব্র্যাকের মহড়ার ইতিবাচক ফল তারা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ও কিছুটা দেখেছেন।
“একটা সহজ কথা হল, এটার ফলে (মহড়া) যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের একটা প্র্যাকটিস হচ্ছে। গ্রামের মানুষ দেখছে, ঘূর্ণিঝড় হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করতে হবে। এটা কতটুকু উপকারে আসছে তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমরা একটা মূল্যায়নও করছি।”