দৈনিক সংগ্রাম বন্ধ না হওয়ায় কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা পরেও দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ-পিআইবির কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 03:24 PM
Updated : 15 Dec 2019, 03:26 PM

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নেতাকর্মীরা দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলেরও দাবি জানান।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লার। জামায়াত নেতা কাদের জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকও ছিলেন।

সেই দিনটির স্মরণে গত বৃহস্পতিবার সংগ্রামের প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেদিন বিকালে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ঘেরাও ও ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা।

দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়টি জামায়াত-শিবিরের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অভিযোগ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পত্রিকাটির ‘ডিক্লারেশন’ বাতিলের দাবি জানানো হয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে।

সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "তথ্য মন্ত্রণালয় ও পিআইবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এরকম সংবাদ দেখেও না দেখার ভান করে অপরাধ করেছেন। এর দায়ভার তারা এড়াতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কোনো আপস করবে না।’’

দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতোমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আবুল আসাদসহ জড়িত সবার শাস্তির পাশাপাশি সংগ্রাম পত্রিকার কার্যালয় বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে নেওয়ার দাবি জানানো হয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে।

পাশাপাশি আইন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা এবং তাদের বংশধরদের তালিকা করে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান মঞ্চের কর্মীরা।

এসব দাবিতে সোমবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

একাত্তরের রাজাকারদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মামুন বলেন, ‘‘সেই সাথে রাজাকারদের বাকি তালিকা এবং এদের বংশধরদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।’’

সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর বেতনভোগী ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর প্রথম তালিকা রোববার প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

তালিকা প্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে মধুর ক্যান্টিন থেকে আনন্দ মিছিল বের করেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় সেই মিছিল।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি আহমেদ হাসনাইন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুব হোসেন নিয়ন, মো. শাহীন মাতব্বর, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা তুজ জোহরা রিপা, ঢাবির এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।