ওই রাজাকারদের নাম বললে আমার দেশে আসা হবে না: গাফফার চৌধুরী

স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এসে রাজাকারদের প্রথম তালিকা প্রকাশের দিন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ‘রাজাকারদের’ নিয়ে বোমা ফাটালেন কলামনিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 02:10 PM
Updated : 15 Dec 2019, 02:24 PM

রোববার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে ‘রাজাকারদের’ পুনর্বাসনের কথা তুলে ধরে এখনও সেই ধারাবাহিকতা চলে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এখনও অনেক ‘রাজাকার’ দাপটে রয়েছে মন্তব্য করে লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ এই লেখক বলেন, “তাদের নাম বলে লাভ নেই। এমনকি আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার আশেপাশেও আছে। গণভবন অরক্ষিত করছে। এবং তাদের নাম বললে আমার আর ঢাকায় আসা হবে না। তাদের নাম বলতে চাই না।এই হচ্ছে অবস্থা।”

একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী যখন এই বক্তব্য দেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে।

ওই তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে থাকা দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম তালিকা রোববার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তবে সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে ততোটা আশাবাদী নন গাফফার চৌধুরী। রাজাকারের তালিকা করার আগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের’ তালিকা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, “দেশে রাজাকারদের তালিকা করার আগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা আগে করতে হবে। কারণ অনেক স্বাধীনতাবিরোধী আওয়ামী লীগের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তাদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে না পারলে রাজাকারদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না।”

“রাজাকারদের তালিকা করবেন দেখা যাবে রাজাকাররাই এসে তালিকা করতেছে। এবং তাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার, আর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোববার সামাজিক সংগঠন সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালির বিজয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।

সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশে বিজয়’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় গাফফার চৌধুরী বলেন, “আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা না থাকলে দেশ আফগানিস্তানের মতো হবে। দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাস আর অরাজকতায় ডুবে যাবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার কিছু হলে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম হবে এবং আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে তাসের ঘরের মতো উড়িয়ে দেওয়া হবে।”

আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী সাহসের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করছেন, যা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়ত পারতেন না। কারণ বঙ্গবন্ধু কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। অনেক রাজাকার আল-বদর আল-শামস এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধীকে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তারা তাদের আমলে এমপি-মন্ত্রীও হয়েছিলেন।”

এর উদাহরণ হিসেবে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীমের ‘হত্যাকারীর’ পরবর্তীতে বাংলাদেশে সামরিক শাসনামলে মন্ত্রী হওয়ার কথা বলেন তিনি।

গাফফার চৌধুরী বলেন, “শহীদ আব্দুল আলীমের সঙ্গে আমার খুবই বন্ধুত্ব ছিল। তাকে হত্যার কয়েক দিন আগে আমার বড় মেয়ের চোখে অসুখ হয়, তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। দেখলাম তিনি এক মওলানার বাড়িতে ভাড়াটিয়া। তাকে তখনই বলেছিলাম যে, আপনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

“তিনি যাননি এবং শেষ মুহূর্তে নির্মমভাবে সেই মওলানাই হত্যা করেছে। সে এরশাদের আমলে মন্ত্রীও হয়েছিল সেই ঘাতক, এবং একটা কাগজেরও সম্পাদক। বিচার হয়নি, বিচার হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। এ রকম আরও অনেক রাজাকার আছে যাদের জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সম্মান দিয়েছে।

“অনেক রাজাকার-একজন, দুজন নয়।”

গাফফার চৌধুরী বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। বাকশাল থাকলে এমন অবস্থা তৈরি হত না, দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করার সাহস হত না কারও।”

যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ সম্বোধন করায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।

তিনি বলেন, “কাদের মোল্লাকে শহীদ আখ্যা দিয়ে সংগ্রাম পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে ও দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়।”

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “কাদের মোল্লাকে শহীদ বলা হয়েছে। যে চারজন কাদের মোল্লাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল, তাদের একজন আমি। সমস্ত নথি আমি দেখেছি। তাদের এই ধৃষ্ঠতা কেন হচ্ছে? এই অপশক্তিকে এখনও নিঃশেষিত করা যায়নি। সংগ্রামের ডিক্লারেশন বাতিল করা হোক।”

প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, “প্রেস ক্লাবে আবার রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। একজন আল-বদরকে এই প্রেস ক্লাবে উত্তরীয় পরানো হয়েছে। আমাকেও দিয়েছিল আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।

“১৫ অগাস্টের পরে কিছু লোক আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। তারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে আর কাজ করে জামাত পুনঃপ্রতিষ্ঠার। এই চক্রান্ত আজও চলছে। ”

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদকন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী ও সাংবাদিক হারুন হাবিব। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।