শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার বাংলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় এই দাবি তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন শুরু করলেও একাত্তরের সেই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় এখনও সম্ভব হয়নি।
“এখন পর্যন্ত পাকিস্তান এবং এর সুবিধাভোগী চক্র নানাভাবে গণহত্যার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এজন্য যেমন একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমাদের তৎপর হতে হবে, তেমনি গণহত্যা অস্বীকারকে অপরাধ আইনের আওতায় আনতে হবে।”
বাংলার মানুষের মুক্তির আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের অভিযানে সেই কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
পাকিস্তানি বাহিনীর সেই নৃশংসতার পর রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি,স্বাধীনতার সংগ্রামে হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি পেয়েছিল চূড়ান্ত স্বাধীনতা।
২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের দাবি রয়েছে বাংলাদেশের,কিন্তু আজও সেই স্বীকৃতি মেলেনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন,“একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা যে ৩০ লাখ, তা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন কিংবা ঠাট্টা-তামাশার অবকাশ নেই। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া, যিনি তিনবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সভায় তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ৩০ লক্ষ সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।
“সেই সভাতেই বিএনপির আরেকজন নেতা গয়েশ্বর রায় বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের বোকামির জন্যই মরেছে।”
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, “একাত্তরের শহীদদের প্রতি এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি অসম্মানজনক। শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কাজটি একমাত্র পাকিস্তানি গণহত্যাকারীরাই করতে পারে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হলেও একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছিল সে বছর মার্চে, ডিসেম্বরে তা তীব্র আকার ধারণ করে।
“নির্মম নৃশংসতায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। দেশের জন্য একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ কখনই বিস্মৃত হবার নয়।”
‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার কারণ এবং গণহত্যাকারীদের বিচার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী হাসান ইমাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।