ডিজিটাল আইনের মামলায় সংগ্রাম সম্পাদক গ্রেপ্তার

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ লেখার ঘটনায় দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2019, 09:27 AM
Updated : 14 Dec 2019, 10:41 AM

সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) গোলাম আযম জানান।

তিনি বলেন, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল শুক্রবার রাতে হাতিরঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ৩১ ও ৩৫ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারায় এ মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

মামলায় সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ ছাড়াও প্রধান প্রতিবেদক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, এবং বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে এজাহারে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ‘মিরপুরের কসাই’খ্যাত কাদের মোল্লার। সেই দিনের স্মরণে বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামের প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’’।

এর প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগ্রাম পত্রিকার কয়েকটি কপি পোড়ান ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। বিকালে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ঘেরাও ও ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন সেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করতে পারি না। যে কেউ স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে আমরা তা প্রতিহত করবই।”

দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়টি জামায়াত-শিবিরের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অভিযোগ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পত্রিকাটির ‘ডিক্লারেশন’ বাতিলের দাবি জানান তিনি।

ওই ঘটনার পর সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে রাতেই হাতিরঝিল থানায় নেওয়া হয় বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ- কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকের্ষণ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “ওরা একাত্তর সালে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তা এখনো অব্যাহত আছে। এ ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মামলার বাদী মোহাম্মদ আফজাল এজাহারে বলেছেন, “বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করিয়া উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করতঃ না দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে ও সংবিধানকে অস্বীকার করিয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করিয়াছে।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে নিয়ে আসা হয় বিচারের কাঠগড়ায়।

তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সংশ্লিষ্টতা এবং দুটিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র-জনতার যে বিক্ষোভের সূচনা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলনের রূপ নিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

এই দাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সংশোধন আনতে বাধ্য হয়। সংশোধিত আইনে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। খালাস চেয়ে কাদের মোল্লাও আপিল আবেদন জমা দেন।

বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় আসে এবং ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।