শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজনে রবিউল হুসাইনের স্মরণ সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ করেন।
গত ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৬ বছর বয়সী রবিউল হুসাইন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পাওয়া রবিউল হুসাইন কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্য। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের ট্রাস্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য।
“২৫ নভেম্বর রাত থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমরা তাকে আইসিইউতে নিয়ে যেতে চিকিৎসকদের অনুরোধ জানাই। তারা বলেন, তিনি যে অধ্যাপকের অধীনে ভর্তি তার অনুমতি লাগবে।তো তিনি (রবিউল হুসাইন) যার মাধ্যমে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার সাথে কথা বলতেও আমরা যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
“পরদিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাসায় গেলে তিনি (চিকিৎসক) নিজের ‘গা’ বাঁচানোর জন্য অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু আমার ভাইয়ের শেষ মুহূর্তের চিকিৎসা নিয়ে ক্ষোভ তো থেকেই গেল।”
তার কথার সূত্র ধরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের বলেন, “একুশে পদক দেওয়া হয় কেন? হ্যাঁ, সবাই চিকিৎসা পাবেন না। কিন্তু বিশেষ বিশেষ মানুষের জন্য বিশেষ জায়গা থাকা উচিৎ। তার তো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসার দরকার ছিল।”
রবিউল হুসাইন তেইশ বছর আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় প্রায় জরাজীর্ণ এক ভবনকে নিজ স্থাপত্য শৈলীতে পরিণত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। কাল পরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি যখন আগারগাঁওয়ের সিভিক সেক্টরে বৃহৎ কলেবর নিয়ে হাজির হল, তার নেপথ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের কথা শোনান ট্রাস্টি সারওয়ার আলী।
নব্বই দশকের শেষভাগে ‘একাত্তরের যাত্রী’ নামে যে সংগঠনটি রবিউল হুসাইন শুরু করেছিলেন, তার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহু সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনের আট ব্যক্তিত্ব।
বাড়ির স্থাপত্য কাঠামো দেখে সারওয়ার আলী সেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বলে অভিমত দেন। তবে স্থপতি রবিউল হুসাইন পেছপা হবেন না। তিনি সে বাড়িটির অন্দরসাজ বদলে দিয়ে শুরু করে দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ।
সারওয়ার আলী বলেন, “সকল ধর্মের মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় মানবিক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে রবিউল হুসাইনকে যথাযথ সম্মান জানানো হবে।”
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, “শিল্পের নানা ধারার মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে দিতেন রবিউল ভাই।”
রামেন্দু মজুমদার বলেন, “তিনি বড় মাপের কবি ছিলেন, ছিলেন স্থপতি। তবে এ নিয়ে তিনি কখনও উচ্চবাচ্য করতেন না। তার চালচলনে বোঝারই উপায় ছিল না। সত্যিকারের ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায়, তা ছিলেন তিনি। তিনি প্রকৃত অর্থেই নিভৃতচারী ছিলেন।”
স্মরণসভায় রবিউল হুসাইনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।