একক কর্তৃত্ব: এবার ইসির সভায় চার কমিশনারের উষ্মা

নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জের ধরে এবার কমিশন সভায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন চার নির্বাচন কমিশনার।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 07:13 PM
Updated : 11 Dec 2019, 07:14 PM

ইসির ৫৬তম সভার আলোচ্যসূচির বাইরে বুধবার সিইসি ও ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব এবং নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ে সরব ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা চার সহকর্মীর উত্থাপিত বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

বুধবার বিকাল ৩টায় সিইসির সভাপতিত্বে কমিশন সভা হয় নির্বাচন ভবনের চার তলার সম্মেলন কক্ষে। চলে সোয়া ৫টা পর্যন্ত।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী একসঙ্গে পঞ্চম তলা থেকে নেমে সভায় যোগ দেন। তাদের সবার বক্তব্য ছিল লিখিত।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। কমিশনকে একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে হবে। আইন-বিধি মেনে কাজ করার বিষয়টি বলেছি।”

সিইসি ও ইসি সচিবের কাজের ‘একক কর্তৃত্ব’ নিয়ে ভারসাম্য আনতে আইন-বিধি মেনে সমন্বয় রাখার প্রস্তাবও এসেছে।

আইন সংশোধনের কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “দুটি ধারার বিষয়ে কথা হয়েছে। এটা সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে কথা হয়নি। আগের কমিশনেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা চাই, সব কিছু মেনে কাজ হোক।”

রফিকুল বলেন, “আমাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগামীতে সমাধানের পথ খুঁজবেন বলে জানিয়েছেন।”

ইসি সচিবালয়ের ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও মিথ্যাচার’ বন্ধ না হলে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব বলেই মন্তব্য করেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

বৈঠকে লিখিত বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, “কমিশন সভায় আমার কথা বলেছি। এ নিয়ে বিস্তারিত এখন ফোনে বলতে প্রস্তুত নই আমি।”

শপথ অনুষ্ঠানে সিইসিসহ (সবার বামে) চার নির্বাচন কমিশনার (ফাইল ছবি)

বৈঠক সূত্র জানায়, চার নির্বাচনের কমিশনারের ইউও নোটের বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের জবাবের সমালোচনা করেন আরেক নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করার বিষয়টি আড়াল করে নির্বাচন কমিশনারদের হেয় করা হয়েছে।

একজন কমিশনারের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “নিয়োগ নিয়ে আমার এক ইউও নোটের (আনঅফিসিয়াল নোট) উত্তরে কমিশন সচিবালয় থেকে যে উত্তর দেওয়া হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনারদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা মাত্র। চিঠির এ উত্তর নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি অপমানজনক। “

আরও দুই কমিশনার সচিবালয়ের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

২০১৭ সালে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার দেড় বছরের মাথায় একক কর্তৃত্বের বিতর্ক দেখা দেয়। এরই এক বছরের মধ্যে ফের অসন্তোষ কমিশনে।

সম্প্রতি শূন্য পদে কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে নভেম্বরে কমিশনে নতুন করে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চার নির্বাচন কমিশনার যৌথভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনঅফিসিয়াল (ইউও) নোটিস দেন।

এ ধারাবাহিকতায় নোটিসের জবাব পাওয়ার পর বুধবার কমিশন সভায় ফের আলোড়ন তুলেন চার নির্বাচন কমিশনার।

‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য নয়’

কমিশন বৈঠকের পর মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “কমিশন সভায় এ ধরনের অনেক ইন্টারনাল আলোচনা হতে পারে। বৈঠকের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমার কথা বলার সুযোগ নেই। এটা একেবারেই গোপনীয় বিষয়।”

কমিশন সভার পর সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. আলমগীর।

কমিশনে মতপার্থক্য থাকলেও কোনো বিভেদ নেই বলে দাবি করেন সচিব।

আলমগীর বলেন, “কাজ করতে গেলে অনেক বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তবে, আপনারা যদি এটাকে ইসির মধ্যে বিভক্তি হয়েছে বলতে চান, তাহলে বলব এ ধরনের কিছু হয়নি। কমিশনের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। বলতে পারেন মতপার্থক্য আছে কিন্তু বিভেদ, বিভক্তি নেই।”

সভায় কমিশনারদের কেউ দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “এটা কমিশন সভার ইন্টারনাল ও গোপনীয় বিষয়। এটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না।”