বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশনা

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বক্তব্যের দুদিনের মাথায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 11:31 AM
Updated : 11 Dec 2019, 11:47 AM

বুধবার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে চিঠিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধসহ ১৩ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতায় সান্ধ্য কোর্স বন্ধের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে বলেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ, উপাচার্যদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং নতুন বিভাগ ও পদ সৃষ্টিতে ইউজিসির পূর্বানুমোদন গ্রহণ, নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণসহ ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বিধায় সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হওয়া দরকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবরতনে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোর্স পড়ে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। এতে ডিগ্রিধারীদের লাভ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এক শ্রেণির শিক্ষক ঠিকই লাভবান হচ্ছেন।

“তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। ফলে শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

নিজস্ব আয় বাড়াতে দেড় দশক ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সান্ধ্যকালীন কোর্স চালিয়ে আসছে। সান্ধ্যকালীন ‘বাণিজ্যিক’ কোর্স বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

ইউজিসির চিঠিতে উপাচার্যদের উদ্দেশে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা নিজেদের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালন করে যাচ্ছেন। তবুও নানা কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা কাম্য নয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খোলা এবং নতুন পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্বানুমোদন নেওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “কিন্তু ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, দেশের কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়।”

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং পদোন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের আইন মেনে চলতে চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিধি বহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’ সুবিধা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হচ্ছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “এমনকি পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। সরকারের আর্থিক বিধি লঙ্ঘন করে দেওয়া হচ্ছে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি-বিধান এবং সরকারের নিয়ম-নীতি প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য।”

সরকারি ‘আর্থিক বিধিমালা’ অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রয়োজনে কমিশনের পরামর্শ নিতে পারে।”