২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠ নির্মূলের উদ্যোগ নিয়ে বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় সম্মেলনে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুরুতেই যদি কুষ্ঠ রোগী হলে কি কি লক্ষণ পাওয়া যায়...প্রাথমিক পর্যায়ে থেকেই যদি আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেই, তাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি।
“তাহলে কিন্তু এই রোগটা আর বৃদ্ধি পায় না, তারা পঙ্গুত্ববরণ করেন না। নতুন কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সেটাও দেখতে হবে। সেই বিষয়টা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। আমরা সেভাবেই দৃষ্টি দিচ্ছি।"
কুষ্ঠ সংক্রমণ নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এই রোগটা সব এলাকায় সমানভাবে ছড়ায় না; পার্বত্য অঞ্চল ও নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের কিছু হতদরিদ্র এলাকায় বেশি দেখা যায়।
কুষ্ঠ রোগীদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি কোনো ধরণের অবহেলা ও হেয় না করে সমাজের অন্য দশজন মানুষের মতো তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
“কুষ্ঠ রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের দূর দূর ছেই ছেই না করে… তারাও সমাজের অংশ, তারাও আমাদের, তারা রোগাক্রান্ত- এই কথাটা মাথায় রেখে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে তারা যে সুস্থ হয়ে উঠবে না তা কিন্তু না এবং এই সুস্থতা তারা পেয়েছে।”
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ছয় বছর পর নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর কুষ্ঠ রোগীদের পাশে থাকার নিজের অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকার কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
রাজধানীর মহাখালীতে প্রয়াত স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সরকারি বাসভবনে অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেখতাম, এই কুষ্ঠ রোগীরা প্রায় ৫০/৬০ জন বা কখনো একটু কম কখনো একটু বেশি তারা ওখানে আমার কাছে চলে আসতো।
“কেন আসত আমি ঠিক জানি না। কিন্তু আসলেই আমি তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতাম, খাদ্য দিতাম। যা ঘরে থাকতো আমি তাদেরকে দিতাম।”
এরপর বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে মিন্টু রোডের বাসায় থাকার সময় এবং বঙ্গবন্ধু ভবন খুলে দেওয়ার পর বিভিন্ন দিবসে ও প্রতিটি ঈদে কুষ্ঠ রোগীরা দেখা করতে আসতেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “তাদের জন্য আমি খাবারের ব্যবস্থা, কম্বল, কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা রাখতাম। তাদের সবাইকে আমি খাবার যা থাকত দিতাম এবং সবাইকে ১০০ করে টাকা দিয়ে দিতাম।
“প্রথম প্রথম অনেকেই তাদের (কুষ্ঠ রোগীদের) খাবার দিতে যেতে চাইত না। মনে করত কাছে গেলেই যেন কি হবে। আমি নিজে যখন দেওয়া শুরু করলাম, কাছে যাওয়া শুরু করলাম আমার সাথে যারা ছিল তারাও তখন আন্তরিকতার সাথে তাদের পাশে দাঁড়াতো। তখন আমি বলেছিলাম, যদি কখনও সরকারে যেতে পারি আপনাদের জন্য একটা ব্যবস্থা আমি করব।”
অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।