আওলাদের ‘ভুয়া পরোয়ানায়’ জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ

ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কারাগারে আটক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনকে আগামী ১৫ জানুয়ারি হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2019, 08:12 AM
Updated : 10 Dec 2019, 08:12 AM

একই সঙ্গে তাকে ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওলাদ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

এছাড়া শেরপুর আদালতের মামলায় জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সঠিক কিনা তা যাচাই করে তাকে জামিন দিতে শেরপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা থাকলে তা যাচাই সাপেক্ষে তার মুক্তির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার, রাজশাহী, বাগেরহাটের আদালত, কারাগার হয়ে এখন শেরপুর কারাগারে আছেন আওলাদ হোসেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। 

জয়নুল আবেদীন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “যদি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তিনি জামিন অথবা মুক্তি পেয়ে যান তাহলে তিনি নিজেই আসবেন। আর যদি কারাগারে থাকেন তাহলে তাকে হাজির করতে হবে।”

আশুলিয়ার মির্জা নগর এলাকার টাকসুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. আওলাদ হোসেনকে কক্সবাজারের একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সেদিন আওলাদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন করা হয়। আদালত তার নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পাঠানোর আদেশ দেয়।

মামলার নথিপত্র কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ পৌঁছালে সেখানেও আওলাদের জামিন আবেদন করা হয়।

গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, ‘মো. আওলাদ হোসেন নামীয় কোনো আসামী নাই। উপনথির সাথে সংযুক্ত কাগজাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে পরোয়ানাটি অত্র ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ইস্যু করা হয় নাই। পরোয়ানাটি সৃজিত। এমতাবস্থায় দাখিলীয় আবেদন (আওলাদের জামিন আবেদন) মঞ্জুর করা হইল। ধৃত মো. আওলাদ হোসেনের প্রতি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর মুক্তিমনা ইস্যু করা হউক।’

এই আদেশটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ জানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় আওলাদকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির‌্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করতে হবে। ওই ট্রাইব্যুনালে আওলাদকে ২৪ নভেম্বর হাজির করলে সেখানেও আওলাদের জামিন চাওয়া হয়।

রাজশাহীর ট্রাইব্যুনাল সেদিন আদেশে বলে, ‘আবেদন ও যাবতীয় কাগজাদি পর্যালোচনা করলাম। ইস্যুকৃত পি/ডব্লিউ (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) অত্র ট্রাইব্যুনাল হইতে প্রেরিত নয়। সার্বিক পর্যালোচনায় আসামী অত্র আদালতের কোন মামলার আসামী নয় বিবেচনায় তাকে বর্ণিত মামলা হতে অব্যাহতি দেয়া হল। তাকে এক্ষুনি মুক্তি দেয়া হউক।’

রাজশাহী ট্রাইব্যুনালের এই আদেশ রাজশাহীর কারাগারে পৌঁছালে কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগেরহাটের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিএমম) আদালতের একটি মামলায় আওলাদকে ১ ডিসেম্বর সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।

১ ডিসেম্বর বাগেরহাটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদেশে বলেন, ‘মামলার মূল নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় মো. আওলাদ হোসেন উক্ত মামলার কোন আসামী নন। আদালতের প্রসেস রেজিস্ট্রার পর্যালোচনায় ৫৩০৯ নম্বর বিশিষ্ট কোন প্রসেসের উল্লেখ পাওয়া যায় না। ফলে উল্লেখিত পি/ডব্লিউ (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) অত্র আদালত থেকে ইস্যু করা হয়নি। এছাড়া পি/ডব্লিউতে যে স্বাক্ষর দেখা যায় তাও অত্র আদালতের বিচারকের নয়।’   

বাগেরহাট আদালতের এই আদেশ বাগেরহাট কারাগারে পৌঁছানোর পর কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, শেরপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিএমএম) আদালতের একটি মামলায় (সিআর ১৫৯/১৮) আওলাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আগামী ১৬ জানুয়ারি আওলাদকে শেরপুরের সিএমএম আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে বলে জানান আইনজীবী এমাদুল হক বশির।

এ আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেরপুরের মামলার নথিপত্র এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ২ ডিসেম্বর থেকে আওলাদ শেরপুর কারাগারে আছেন।”

তিনি বলেন, “এসব গ্রেপ্তারি ও হাজিরা পরোয়ানা যে ভুয়া তা তিন তিনটি আদালতে প্রমাণ হয়েছে। তারপরও আওলাদ মুক্তি পাচ্ছেন না। ফলে তাকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিত হতেই আওলাদের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন গত রোববার রিট আবেদন করেন। সে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছে।”

মো. আওলাদ হোসেনকে আইনবহির্ভুতভাবে আটক রাখা হয়নি, সে বিষয়টি আদালতকে নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি), র‌্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষসহ ১৩ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।