‘অজয় রায়ের দুর্ভাগ্য বিচার দেখে যেতে পারলেন না’

ছেলে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে না পারাটা পদার্থবিদ, মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ে দুর্ভাগ্য বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 12:05 PM
Updated : 9 Dec 2019, 12:05 PM

সোমবার অজয় রায়ের মৃত্যুর পর রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে ছটে যান শাহরিয়ার কবির।

নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অজয় রায়ের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “অজয় রায় বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনের একজন পুরোগামী ভক্ত ছিলেন। দীর্ঘকাল তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তার নির্বাচক কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

“আমরা যখন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম সেই ১৯৯২ সাল থেকে তিনি আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তৈরি করেছিল বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, আমাদেরকে জেলে নেওয়া, সেই সময় অধ্যাপক অজয় রায় আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। আমার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন নোবেল লোরিয়েটদের চিঠি লিখেছেন।”

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মুক্ত চিন্তার জগতের একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন তিনি। তার বিদায়ের মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোদিন পূর্ণ হবে না। আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছি।”

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে বেরিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন অজয় রায়ের ছেলে প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়। সেদিন উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হয়ে হাতের আঙুল হারান অভিজিতের স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও।

শাহরিয়ার কবির বলেন, অজয় রায়ের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল অভিজিতের মৃত্যু।

“এই শোক তিনি সামলাতে পারেননি। তারপর থেকে তার শরীর ভেঙে গেছে। যতদিন সক্রিয় ছিলেন তিনি আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে বারবার তাকে যেভাবে আদালতের হাজিরা দিতে হয়েছে এটা প্রত্যাশিত ছিল না। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছিলাম ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার আদালতে সম্পন্ন করতে। এটা হয়নি, হোলি আর্টিজান মামলায় যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ব্লগারদের মামলায় রাষ্ট্র অতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”

“কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অজয় রায়ের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। কারণ তার স্বামী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়া তার (অজয় রায়) ছাত্র ছিলেন। অভিজিতের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী তার খোঁজ নিয়েছেন, তার বাড়িতে গিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “অভিজিৎসহ অন্যান্য ব্লগারদের হত্যার বিচারে যে বিলম্ব… এটা দুর্ভাগ্য যে অজয় রায় বিচার দেখে যেতে পারেননি। এটা আমাদের ক্ষোভ। আমি মনে করি তিনি শারীরিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও চেতনাগতভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।”

এসময় অজয় রায়ের ছোট ছেলে অনুজিৎ রায় এবং অনুজিতের স্ত্রী কেয়া বর্মণ উপস্থিত ছিলেন।