হোটেল ওলিও: বিচারের জন্য মামলার নথি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনালে

রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অবস্থান নিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 10:04 AM
Updated : 9 Dec 2019, 10:06 AM

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী সোমবার পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে নথিপত্র বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ গত ২৪ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক, তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নও মুসলিম আব্দুল্লাহ ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম।

২০১৭ সালে ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালান কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা।

কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই অভিযানের এক পর্যায়ে চারতলা হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।

পরে পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, সাইফুল ইসলাম নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছেন। 

আর হামলা পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কলাবাগান থানার এই মামলা দায়ের করেন এসআই সৈয়দ ইমরুল সায়েদ।

মৃত্যু হওয়ায় সাইফুলের নাম মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।  ১৪ আসামির সবাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন এবং তাদের মধ্যে দশজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা প্রত্যেকেই নব্য জেএমবির সদস্য। নিজেদের অবস্থানের জানান দিতে জাতীয় শোক দিবসে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ওপর বোমা হামলা চালানোই ছিল জঙ্গিদের এ দলটির উদ্দেশ্য।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত ৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যখন জঙ্গিরা কোনঠাসা, তখন আকরাম হোসেন খান নিলয় সংগঠনের দায়িত্ব নেন।

“শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হল নিলয়। তাদের প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা ছিল। তাদের অর্থ যোগানদাতা ছিলেন তানভীর, তার স্ত্রী এবং নিলয়ের মা-বাবা ও বোন। বোমার সরঞ্জাম সরবরাহ করেন কাশেম, শহিদ মিস্ত্রী ও ছোটন।”

মনিরুল সেদিন বলেন, সরবরাহ করা ওই সরঞ্জাম দিয়ে বোমা বানিয়েছিলেন মামুন। বাকি চারজন ছিলেন তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সহায়তাকারী ও আশ্রয়দাতা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিদের মধ্যে আব্দুল্লাহ একজন নও মুসলিম। তার আগের নাম ছিল রনবীর কান্তি দাশ। একজন মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করার পর তিনি সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম নেন। পরে ‘ধর্মের অপব্যাখ্যায় আকৃষ্ট হয়ে’ জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।  এ মামলার আসামি তারেক মোহাম্মদ আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল, নাজমুল হাসান মামুনসহ নব্য জেএমবি সদস্যদের তিনি তার কক্সবাজারের বাসায় ‘আশ্রয়-প্রশ্রয়’ দিতেন।