ঢাবির হলে ‘বহিরাগত উচ্ছেদে’ একজনের মাথা ফেটেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে এক ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে অবস্থানরত ‘বহিরাগত’ একজনের মাথা ফাটিয়েছেন সংগঠনের আরেক নেতার অনুসারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 05:22 PM
Updated : 7 Dec 2019, 05:25 PM

আহত সুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক ও হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিলন খানের কক্ষে ছিলেন তিনি।

হল সংসদের জিএস ও হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদারের অনুসারীরা শনিবার বিকালে ওই কক্ষে গিয়ে তাকে মারধর করেন।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে মিলন বলেছেন, হল ছাত্রলীগের আগামী সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ পদের একজন প্রার্থী তিনি। এ সময় তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তার কক্ষে গিয়ে অতিথিকে মারধর করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিজার বলেছেন, সুজন নামের ওই ব্যক্তি মিলনকে ‘ভাড়া দিয়ে’ ওই কক্ষে থাকেন বলে তাদের কাছে অভিযোগ আছে। সেজন্য হলকে বহিরাগত মুক্ত করতে তাকে ধরা হয়েছে। 

মার খাওয়ার পর বহিরাগত সুজনকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আবাসিক শিক্ষকরা

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিকেল ৫টার দিকে হলের সিজারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ‘বহিরাগত উচ্ছেদের’ জন্য দ্বিতীয় তলার পশ্চিম ব্লকে মিলন খানের ১৫২ নম্বর কক্ষে যান। সেখানে সুজনকে একা পেয়ে মারধর এবং তার বিছানাপত্র কক্ষ থেকে বের করে দেন তারা। এ সময় সুজন মাথায় আঘাত পান এবং তার মুখ বেয়ে রক্ত পড়ে। খবর পেয়ে মিলন তার অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন।

তখন হল সংসদের ভিপি কামাল উদ্দিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল ও হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনার এক পর্যায়ে আবার উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হলের জানালা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে আবাসিক শিক্ষকরা বহিরাগত সুজনকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।

চারজনের থাকার উপযোগী ১৫২ নম্বর কক্ষে মিলন খান ও বহিরাগত সুজন দুজনই থাকেন বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। অন্যদিকে হলে আবাসন সংকটের কারণে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও ‘গণরুম’ ও হলের বারান্দায় থাকতে হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে মিলন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাবল বেডের আমার এই রুমটিতে আমি এবং ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা থাকেন। সুজন এখানে থাকেন না। তিনি আমার গেস্ট। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য মাঝে মাঝে এসে আমার রুমে দুই-তিন দিন করে থাকে।”

‘বহিরাগত উচ্ছেদ’ অভিযানের নামে জিএস সিজার তার অনুসারীদের নিয়ে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক মিলন।

“আমার রুমে গেস্ট থাকা নিয়ে যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তিনি (সিজার) আমাকে বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে আমার অনুপস্থিতিতে আমার গেস্টকে মারধর এবং আমার রুম ভাংচুর করেছেন অনুসারীদের নিয়ে। আমার প্রশ্ন হল, তিনি হলের সম্মানিত জিএস হয়ে কীভাবে এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে পারলেন?”

হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী এই নেতা বলেন, “সামনে হল ছাত্রলীগের সম্মেলন, আর সেখানে আমি একজন প্রার্থী। হলে আমার ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র।”

এ বিষয়ে জুলিয়াস সিজার সাংবাদিকদের বলেন, “দীর্ঘদিন এসএম হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অছাত্ররা থাকছে। এখানে থেকে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। আজ আমরা হল সংসদ ও হল ছাত্রলীগ নেতারা সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অছাত্র ও বহিরাগত উচ্ছেদ করে হলকে বৈধ ছাত্রদের জন্য বসবাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত করব। তার প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে সুজনকে ধরেছি। এর নামে অভিযোগ আছে, সে সমাজসেবা সম্পাদক মিলন খানকে টাকা দিয়ে ভাড়া থাকে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল সংসদের ভিপি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলের রুম নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে হল সংসদ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন মিলে এই ঝামেলার সমাধান করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।