দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে ন্যায়বিচার করুন: প্রধানমন্ত্রী

দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মেধা-মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 07:35 AM
Updated : 7 Dec 2019, 07:39 AM

শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।      

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি দেশ, জনগণ এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকগণ আপনারা আপনাদের মেধা-মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। আমি চাই না যে আমার মতো স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বছরের পর বছর কেউ অপেক্ষা করুক “

বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অনেক বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ … যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় দেওয়া। অনেক বাধা ছিল। সেই বাধা অতিক্রম করে এই রায় দেওয়া হয়েছে।

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে এবং এরকম বহু ঘটনা। সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ.. কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে একটা ছাত্রীকে কিভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সেই বিচারের রায়, নুসরাত হত্যার কথা আমি বলছি। একেকটা দৃষ্টান্ত। অনেকগুলো রায় খুব দ্রুত দেওয়ার ফলে আমি বলব বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস অনেক অনেক বেড়ে গেছে।” 

রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনটি অঙ্গ চলবে তাদের নিজস্ব আইন দ্বারা, নীতি দ্বারা চলবে, এটা ঠিক, আবার তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে, যা দেশকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

“যেটা একান্ত ভাবে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া এবং উন্নয়নের জন্য একান্ত ভাবে অপরিহার্য বলে আমি বিশ্বাস করি।” 

দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লংঘন করে, মার্শাল ল জারি করে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, আবার সেই অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করেছিল তারা ভোট কারচুপির মাধ্যমে একটা পার্লামেন্ট বসিয়ে। এটা একবার না, বারবার হয়েছে।

“আমাদের বিচার বিভাগ উচ্চ আদালত সেই অবৈধ ক্ষমতাকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করেছে। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি এজন্য যে এই সাহসী ভূমিকা আপনারা  রেখেছিলেন।”

বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। মহাকাশ আমরা জয় করেছি। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগীয় ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম যাতে চালু হয় সেই পদক্ষেপ আমরা ইতিমধ্যে নিয়েছি। সেটা হলে মামলার জট আরও কমতে সুবিধা হবে।” 

বিচারকদের মামলার রায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখার অনুরোধ জানান সরকার প্রধান।

“আমাদের মামলার রায় লেখা হয় শুধু ইংরেজি ভাষায়, তাতে অনেক সময় আমাদের সাধারণ মানুষ যারা হয়ত ইংরেজি ভালো বোঝেও না, তারা কিন্তু ধোঁকায় পড়ে যায়। তারা সঠিক জানতে পারে না যে রায়টা কী হলো। সেই জন্য ইংরেজিতে লেখা হোক কিন্তু সাথে সাথে বাংলায় থাকা উচিৎ।”

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশে আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব রাখেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রস্তাবটা খুবই ভালো লেগেছে। এটা কিন্তু একদম নতুন একটা প্রস্তাব। এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। মনে করি প্রধান বিচারপতির সাথে আলাপ করে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসলে আমরা এটা খুব দ্রুত যাতে হয় সেই ব্যবস্থাটা করে দেব। পৃথিবীর সব দেশে আছে। আমাদের দেশে কেন থাকবে না।” 

অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে জাতির পিতার ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।