স্বীকৃতি-সহযোগিতা চান রমনা কালী মন্দিরে শহীদদের স্বজনরা

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় রমনা কালীমন্দিরে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2019, 06:52 PM
Updated : 6 Dec 2019, 07:02 PM

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম- এর ১৯৭১ সালের ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পুনর্বাসন কমিটি এই মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায় বলেন, “ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী শক্তিতীর্থ রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম প্রায় পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন এক সনাতনী ধর্মালয়। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ রাতে শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমের সেবায়েতসহ প্রায় একশ সন্ন্যাসী, ভক্ত ও সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়।

“স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকারদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুই হাজার টাকার চেক প্রধানসহ একটি করে প্রসংশাপত্র দেন। কিন্তু এর পরে আর কেউ তাদের খবর রাখেননি।

“সহায় সম্বলহীন ও আশাহত পরিবারবর্গের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ২০১৮ সালের ২০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করলেও এখনও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।”

মানববন্ধনে শোকলাল রবিদাস বলেন, “তখন আমার বয়স ৬ বছর, দাদি পিসি ও পিসাত ভাইকে নিয়ে ছিলাম। পরিবারের সবাই তখন মারা গেছে। আমি বেঁচে ছিলাম। এখনও পর্যন্ত থাকার কোনো জায়গা পাইনি, আমরা এখন রাস্তার ভিখারি। আমাদের থাকার একটু ব্যবস্থা করে দিলে উপকৃত হব।”

নিহত পরিবারের সদস্য মাধবী পাসি বলেন, “গুলাগুলি আমাদের চোখের সামনে হয়েছে, সব দেখছি, কিছু বলার ছিল না। আমার পরিবারের সবাইকে পাকিস্তানিরা মাইরা ফালাইছে। এখনও থাকার কোনো জায়গা পাই নাই। একটু থাকার ব্যবস্থা চাই।”

শংকর লাল ঘোষ বলেন, “পাকিস্তানিরা যখন লাইন ধরিয়ে গুলি শুরু করে তখন আমার হাতে গুলি লাগে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে লাশের মাঝখান থেকে আমাকে অন্যরা খুঁজে বের করে। তখন আমার বয়স ১৬ বছর। এত দিন ধরে নানাভাবে জীবনযাপন করছি। বস্তির মতো বাসায় ভাড়ায় থাকি, খুব কষ্ট হয়। সরকার একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিলে অন্তত বাকি জীবনটা বেঁচে থাকতে পারতাম।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পোস্তগোলায় আমাদের তাঁবু করে দিয়েছিল থাকার জন্য। পরে জিয়া ক্ষমতায় আসলে আমাদের এই জায়গা থেকে উঠিয়ে দেয়। এখন যাত্রাবাড়ীতে থাকি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সামনে জুতার কাজ করেন গনেশ।

মানববন্ধনে তিনি বলেন, “এখন কামরাঙ্গীরচরে থাকি। মন্দিরে হামলার সময় আমার বয়স চার বছরের মতো। ওই দিন মা ছাড়া পরিবারের কেউ বেঁচে ছিল না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, সরকার যেন আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়।”

মানববন্ধনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায় তিনটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল- রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমের গণহত্যায় নিহত শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত করা; শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন করা।