গণতন্ত্র থাকলে রামপাল, রূপপুর প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হত: আনু মুহাম্মদ

দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকলে রামপালে কয়লাভিত্তিক ও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরকার বহু আগেই সরে আসতো বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2019, 01:38 PM
Updated : 6 Dec 2019, 02:53 PM

শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিএমএ মিলনায়তনে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

‘সুন্দরবন ও উপকূল বিনাশী’ কয়লা বিদ্যুৎ এবং ‘দেশবিনাশী’ পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল, গ্যাস রপ্তানিমুখী পিএসসি ২০১৯ বাতিল এবং গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দাবি সামনে রেখে হচ্ছে এবারের সম্মেলন।

জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, দেশে গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে জাতীয় কমিটির আন্দোলন এত দীর্ঘ হত না। কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের মত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তত্ত্ব ও বিশেষজ্ঞ মত, সেগুলো গুরুত্ব পায়।

“সেগুলো গুরুত্ব পেলে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হত, জনবহুল দেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হত।”

দেশের উন্নয়নের জোয়ার বিষাক্ত জোয়ারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের পানি বিষাক্ত, নদী বিষাক্ত, বাতাসে শ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশে সর্বনিকৃষ্ট বায়ূ দূষণ।

“নদী দূষণ, পানি দূষণে বাংলাদেশ রেকর্ড করছে। সন্ত্রাসে রেকর্ড করছে। গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নে রেকর্ড করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে রেকর্ড করছে।”

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ ঝুঁকির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অথচ সরকার নদী, বন, মানুষ বিনাশী সকল প্রকল্প নিয়ে দেশকে আরও বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

“কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত পুরো উপকূলজুড়ে প্রায় ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়োজন করা হচ্ছে।”

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ফের চক্রান্ত শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের লক্ষ্য মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়, দেশি-বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা দেওয়া।

“আর তাদের আধিপত্যের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখা। আর দেশের ভেতরে বৃহত্তর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আছে তাদের লুণ্ঠন, দুর্নীতি-আগ্রাসন, জমি দখল সেগুলোকে নিশ্চিত করা।”

সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। আমরা আজ ধ্বসের মুখোমুখি। এই ধ্বংস প্রকৃতি দাঁড় করায়নি। মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। সেই মুনুষ্য সৃষ্ট বিপযয় তৈরি করা হয়েছে কিছু গোষ্ঠীর সুবিধা করে দেওয়ার জন্য।

“এত বড় ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশটিকে আজকে আবার দেখছি ভয়ঙ্করভাবে একটা দুর্বৃত্তায়নের চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নাম দিয়ে যুদ্ধ করলাম। আমরা শুধু একটা ভূখণ্ড দখলের জন্য যুদ্ধ করিনি।”

তিনি বলেন, সরকার জনবান্ধব ও নারীবান্ধব সরকার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। তারা এখন শুধুমাত্র ব্যবসা কিংবা ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আমাদের মূল যে লড়াই তা হবে সামাজিক বিপ্লবের লড়াই, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। পুঁজিবাদকে বিদায় করতে না পারলে ভবিষৎ নেই। সামাজিক বিপ্লবের জন্য আমাদের জ্ঞানের দরকার হবে। পৃথিবীটা বদলাবার জন্য দরকার জ্ঞান। এই জাতীয় কমিটি সেই দায়িত্ব অনেকটা পালন করছে।”

জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে ও সিপিবির নেতা লুনা নুরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।