৯০ লাখের বেশি নাগরিক যুক্ত হচ্ছেন ভোটার তালিকায়

ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষ্যে এবার ৯০ লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2019, 06:09 AM
Updated : 6 Dec 2019, 06:09 AM

পনের থেকে আঠার বছর বয়সী (২০০১-২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম ) এসব নাগরিকের ছবি, চোখের আইরিশ ও দশ আঙুলের ছাপসহ নিবন্ধন কাজ নভেম্বরে শেষ হয়েছে।

২০২০ থেকে ২০২২ সালে পর্যায়ক্রমে এদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সে হিসাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় অন্তত সোয়া ১১ কোটি ভোটার থাকবে, যেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখের মতো।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হবে তাদের নাম খসড়া তালিকায় প্রকাশ করা হবে। দাবি-আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।

হালনাগাদের পর প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ এবং ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের বিধান থাকলেও এবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান সময়সীমায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

ভোটার তালিকা আইনে বলা রয়েছে, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে হালনাগাদ করা হবে। তবে শর্ত থাকে যে, যদি ভোটার তালিকা এভাবে হালনাগাদ করা না হয় তাহলে এর বৈধতা বা ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার মনে হয় ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে না। ভোটার দিবসকে সামনে রেখে ২০ জানুয়ারি খসড়া প্রকাশ করে ১ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে চাই। আমরা এ বিষয়টির জন্যে বিদ্যমান আইন সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।”

আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।

হালনাগাদের আগে বর্তমানে দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন পুরুষ, আর ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন নারী। অর্থাৎ, ভোটার তালিকায় পুরুষ ও নারীর অনুপাত- ৫০.৪২: ৪৯.৫৮।

প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ নতুন ভোটার বিবেচনায় এবার হালনাগাদে প্রায় কোটি ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ধারণা করা হয়েছিল।

কিছু কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করার অভিযোগও উঠেছিল। গেল জুলাইয়ে ইসি সচিব আলমগীর সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বাড়ি বাড়ি যায় না- এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে এবং সেটা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আনা হবে। খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখানে দায়িত্ব অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।

২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। প্রথমবারের মতো ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ ও মৃতদের বাদ দেওয়াসহ হালনাগাদ কাজ চলে। ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে হালনাগাদ করা হয়।

এবার সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়েছিল ২৩ এপ্রিল।

হালনাগাদ ২০১৯

এ হালনাগাদে (১৫-১৮ বছর বয়সী) চার বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এ রকম নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন করা হয়।

এর মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের নাম ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর যাদের বয়স এখনও ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের ১৮ বছর পূর্ণ হলে ২০২২ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় আকারের এ হালনাগাদ হল।

লোকবল: ৫২ হাজার ৫০০ জন তথ্য সংগ্রহকারী, ১০ হাজার ৫০০ জন সুপারভাইজার ও ৭৮০ জন সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মোট ১০ শতাংশ ভোটার বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারের পাশাপাশি মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে ও ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নেওয়া হয়।

বুধবার ইসির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুয়েকদিনের মধ্যে একীভূত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে ১৫ বছর বয়সী, ১৬ বছর বয়সী, ১৭ বছর বয়সী ও ১৮ বছর বয়সীদের পূর্ণাঙ্গ ও আলাদা তথ্য সরবরাহ সম্ভব হবে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশে ১০ কোটি ৪২ লাখের মতো ভোটার ছিল। মৃতদের বাদ দিয়ে মোট ভোটারযোগ্যদের হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় অন্তত সোয়া ১১ কোটি ভোটার থাকবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ লাখ ৬৬ হাজারের তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২০২০ সালে ভোটারযোগ্য নাগরিক তুলনামূলক কম থাকবে। কম বয়সীদের (১৫-১৭) সংখ্যাই বেশি হবে, যারা ২০২১, ২০২২ সালে ভোটার তালিকাভূক্ত হবে।