খালেদার মামলা ঘিরে তুমুল হট্টগোল সুপ্রিম কোর্টে

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ আদালতে তুমুল হট্টগোল করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা, যাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 05:03 PM
Updated : 5 Dec 2019, 05:05 PM

বৃহস্পতিবার তাদের হৈ চৈ আর স্লোগানের কারণে বিশৃঙ্খল এজলাসে আর কোনো মামলার শুনানি নিতে পারেননি প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, “সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার, বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার।”

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের আচরণকে ফ্যাসিবাদী বলেছেন। অন্যদিকে তাকেই দুষছেন বিএনপির আইনজীবীরা।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জামিন আবেদনের আদেশ হওয়ার কথা ছিল প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে।

দুটি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদা এই মামলায় জামিন পেলেই মুক্ত হবেন বলে বিএনপির আইনজীবীরা বলে আসছেন। সেই আশায় আদালতে জড়ো ছিলেন দলটির অনেক আইনজীবী।

কারাবন্দি খালেদা চিকিৎসার জন্য গত এপ্রিল মাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে রয়েছেন, তার অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটেছে বলে বিএনপির দাবি।

খালেদার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে গত ২৮ নভেম্বর তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ওই মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে আসার কথা ছিল।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য সর্বোচ্চ আদালতে বৃহস্পতিবার নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে শুনানির শুরুতেই বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা হয়েছে, কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেজন্য সময় প্রয়োজন বলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি এ সময় আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে তার আগেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির আইনজীবীরা শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার দাবিতে আদালত কক্ষের ভেতরে হৈ চৈ শুরু করেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মওদুদ আহমদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নিতাই রায় চৌধুরী এ সময় জুনিয়র আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে আদালত কক্ষে আটকা পড়েন।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আজমালুল হোসেন কিউসি, ফজলে নূর তাপস, কামরুল ইসলাম আটকা পড়েন আদালত কক্ষে।

কয়েকবার চেষ্টার পরও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা শান্ত না হওয়ায় বিচারকরা সকাল সোয়া ১০টার দিকে এজলাস থেকে নেমে যান। ফলে আপিল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।

কিছুক্ষণ পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উত্তর হলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্রিফিংয়ে আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আবদুল মতিন খসরু, ফজলে নূর তাপসসহ সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।  তার আগে তারা প্রতিবাদ মিছিলও করেন।     

সরকার সমর্থক আইনজীবীদের এই ব্রিফিংয়ের সময়ও আপিল বিভাগের এজলাসের ভেতরে বিএনপি সমর্থকদের হৈ চৈ স্লোগান চলছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে ক্যান্ডি বিতরণ করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।

এর কিছুক্ষণ পর বিচারকরা এজলাসে ফিরে এলে আদালতের কর্মচারীরা কার্যতালিকার পরবর্তী মামলার নম্বরগুলো ডাকতে শুরু করেন।

বিএনপির আইনজীবীরা খালেদার জামিন শুনানি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা এখন আর অন্য কিছু শুনব না। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার, বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার। এটা নজিরবিহীন। আমি এর আগে আদালতের এই পরিস্থিতি দেখিনি।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ সময় ডায়াসের দিকে এগিয়ে গেলে তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্লিজ, টেইক ইয়োর সিট।”

জয়নুল আবেদীন তখন বলেন, “অনেক কথাই তো বলা যায়… সরকারপ্রধান বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন… ।”

তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কে কী বললো, তা দেখে আমরা বিচার করি না। মামলার কাগজপত্র দেখে আমরা বিচার করব।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীনও যে বিভিন্ন মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে কয়টা মামলা? কোর্ট থেকেই তো জামিনে আছেন। আবার কোর্টে এসেই শক্তি দেখাচ্ছেন। আমরা এটা নিয়ে আর কথা বলব না, অন্য আইটেম দেখব।”

খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব কথা বলতে চাইলে প্রধান বিচারপতি তাকে বলেন, “অর্ডার হ্যাজ বিন পাসড।”

এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাই লর্ড, এক মিনিট, অর্ডারটা রিভিউ করেন, দয়া করেন।”

মাহবুবউদ্দিন খোকন এ সময় বলেন, “খালেদা জিয়া মারা যাচ্ছেন, অর্ডারটা রিভিউ করেন।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, “সবাই বলছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের আগে শুনতে পারবেন না।… আমরা আর কোনো কথা শুনব না।”

বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এজলাস কক্ষ থেকে বের হতে চাইলেও জুনিয়রদের বাধার মুখে আবার আসনে ফিরে যান।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম, আইনজীবী জমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ফজলে নূর তাপস এগিয়ে গিয়ে বিএনপির আইনজীবীদের বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।

কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে স্লোগান, হৈ চৈ চালিয়ে যান খালেদা জিয়ার সমর্থকরা। তারা স্লোগান দেন- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘বেইল ফর খালেদা জিয়া’। আদালতকক্ষ থেকে বের হতে বা নতুন করে কাউকে ঢুকতে বাধা দেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

এর মধ্যে একটি মামলার শুনানি শুরুর চেষ্টা হলেও পরে তা মুলতবি করেন প্রধান বিচারক। খালেদা জিয়ার মামলার পর আর কোনো মামলার ‍শুনানিই এদিন চালানো যায়নি।

লম্বা সময় এজলাসে অপেক্ষা করেও বিশৃঙ্খলার কারণে বিচার কার্যক্রম চালাতে না পেরে বেলা সোয়া ১টার দিকে এজলাস ছাড়েন বিচারকরা। এরপর বিএনপির আইনজীবীরাও স্লোগান দিতে দিতে ধীরে ধীরে আদালত কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান।

সর্বোচ্চ আদালতে বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোলের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ফ্যাসিবাদী আচরণ: অ্যাটর্নি জেনারেল

সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তার পক্ষের আইনজীবীরা যে আচরণ করেছেন, তাকে অভাবনীয় ও ফ্যাসিবাদী বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে শুধু আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত আইনজীবীদেরই আদালত কক্ষে ঢুকতে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সকাল ৯টায় আদালত বসেছে। তাদের আইটেমটা যখন মুলতবি করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, তারপরে তারা যে আচরণ করেছেন, এটা অভাবনীয় এবং ফ্যাসিবাদী আচরণ।”

খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আদালত কক্ষে বসে থেকে ‘এটা থামানোর চেষ্টা করেননি’ বলেও অভিযোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

খালেদার আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তারা কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলার আপিল শুনানির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের দুটি আপিলই রেডি। অথচ তারা আপিল শুনানির কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। নানা অজুহাতে এবং এই মামলাটিতে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন।”

 “একটা অপরাধী অপরাধ করেছেন, তার বিচার হবে। বিচারে আদালত যদি মনে করে জামিন দিবে বা জামিন দিবে না। কিন্তু আদালতের সামনে গিয়ে এ রকম শ্লোগান, হট্টগোল করে আদালতের কাজে বাধার সৃষ্টি করার মতো চরম ফ্যাসিবাদী কাজ আর হয় না,” বলেন মাহবুবে আলম।

সংবাদ সম্মেলনে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “বিএনপি যে আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না আজকে তার প্রমাণ হয়েছে। আমি জীবনে বিশ্বাস করি নাই যে সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে ঢুকে তারা এ ধরনের আচরণ করবে। তারা যে আচরণ করেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

“আমি এ আচরণকে ঘৃণা করি, আমরা সবাই ঘৃণা করি। মাননীয় আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আগামীতে এ ধরনের আচরণ হলে আমরা জানি এর জবাব কীভাবে দিতে হয়।” 

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস বলেন, “আজকে আদালতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিচারকে প্রভাবিত করার জন্য। বিএনপি গোষ্ঠী জোরপূর্বক জামিন আদায়ের চেষ্টা নিয়েছে বা চেষ্টা তারা করেছে।

“এর মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলেই অসুস্থ না। তাদের এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে এটাই বোঝা যাচ্ছে, তিনি আসলে অসুস্থ না, জোরপূর্বকভাবে জামিন আদায় করবে বিচারলায় থেকে।”

সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের মালিক এই দেশের মানুষ। দেশের মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতা, নিরপেক্ষতা, ভাবমূর্তি রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সুপ্রিম কোর্টে তারা যে আচরণ করেছে, তারা সমস্ত সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ করে রেখেছে।

“তারা আদালতের কাজে বাধা দিয়ে আদালত অবমাননার অপরাধ করেছেন, এটা শাস্তিযোগ্য। মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করতে চাই, ভবিষ্যতে না, এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে ভবিষ্যতেও তারা এ রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ করবে। আগামী তারিখে একই ঘটনা করবে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম আমিন উদ্দিন বলেন, “আমি কোনো দিন এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। এটা ন্যক্কারজনক, নিন্দনীয় ঘটনা। আদালতকে আদালতের কাজ পরিচালনা করতে বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নিন্দনীয়ভাবে তারা কাজ করে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হল, যারা এ ধরনের কাজ করল তারা কিন্তু অধিকাংশই এই আদালতের আইনজীবী না। তারা বহিরাগত, তাদের নিয়ে আসা হয়েছে।”

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি পেছানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আপিল বিভাগের এজলাসকক্ষে তুমুল হট্টগোলের পর বাইরেও স্লোগান দিয়ে মিছিল করে।

অভিযোগ অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে

খালেদা জিয়ার জামিন প্রত্যাশী তার আইনজীবীরা আদালত কক্ষে তাদের পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোলকে ‘ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ বলছেন। তারা না থাকলে ‘আরও বড় কিছু হতে পারত’ বলেও মন্তব্য করেছেন একজন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনের পর সেখানেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন না হওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়ী করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তার সব দায়-দায়িত্ব অ্যাটর্নি জেনারেলের। কেননা এই মামলায় বেগম জিয়ার জামিনের জন্য মেডিকেল রিপোর্টের দরকার হয় না। এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর। আদালত তাকে সাত বছরই দিয়েছে।”

এ ধরনের মামলায় অন্য আসামিদের জামিন হলেও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে’ খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব।

অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, “আজকে আমরা যদি না থাকতাম, তাহলে সেখানে আরও অনেক কিছু ঘটত। সেক্ষেত্রে আমাদের যুবক আইনজীবীরা ধৈর্য সহকারে শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান দিয়ে এসেছে। আমরা না থাকলে হয়ত আর কিছু হতে পারত।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ আদালতের সাত দিন সময় নেওয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত’ মন্তব্য করে বলেন, “আমাদের আইনজীবীরা আজকে প্রচণ্ড প্রতিবাদ করেছে। তারা ন্যায়বিচার চান বলে দাবি করেছেন আদালত কক্ষে। ক্ষোভের থেকে করেছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছেন। আমরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এটা সম্ভবপর হয়নি। আমরা একই পরিবারের সবাই। তাদের সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেখানে থাকতে হয়েছে। আমি পেশাগত জীবনে এ রকম ঘটনা দেখেনি।”

জয়নুল আবেদীন বলেন, “আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনে আগামী বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দিলেন। আমরা বলেছি, মাননীয় আদালত তার অবস্থা এখন এমনই যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার শরীরের কী অবস্থা সৃষ্টি হয়, ডাক্তাররাও ভরসা করতে পারছেন না।

“আমরা আগামী রোববারের কথা বলেছি, আদালত আমাদের কথা শুনলেন না। আদালত তার আগের আদেশে অনড় রইলেন।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বিকালে আদালতে সংঘটিত ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান।

‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: আইনমন্ত্রী

আপিল বিভাগে আইনজীবীদের বিশৃঙ্খলার খবর শুনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বিকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে অপমান বা অবমাননা করতে সরকার দেবে না।

“কারণ দেশের জনগণকে নিরাপদে থাকতে দেওয়ার জন্য দেশের আইনশৃখলা পরিস্থিতি রক্ষা করা এবং বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা আমাদের দ্বায়িত্ব। যারাই এরূপ আচরণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বাধ্য হবে।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হক বলেন,“অতীতেও আমরা দেখেছি যে, বিএনপিপন্থি আইনজীবী এবং বিএনপি সমর্থক বহিরাগতরা তাদের বিরুদ্ধে আদালত কোনো আদেশ বা রায় দিলে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।

“বিএনপির এই কর্মকাণ্ডে পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপির আইনের শাসনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর তাদের কোনো আনুগত্য নেই এবং বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে নিরাপদ নয়।”