বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন না হওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়ী করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, “আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তার সব দায়-দায়িত্ব অ্যাটর্নি জেনারেলের। কেননা এই মামলায় বেগম জিয়ার জামিনের জন্য মেডিকেল রিপোর্টের দরকার হয় না। এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর। আদালত তাকে সাত বছরই দিয়েছে।”
এ ধরনের মামলায় অন্য আসামিদের জামিন হলেও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে’ খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমি প্রথম থেকে বলে এসেছি, রাজনৈতি প্রতিহিংসার জন্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা যাবে না। তারই প্রমাণ আজকে আপনারা পেয়েছেন। যেখানে সাত বছেরের সাজার মধ্যে দেড় বছর ধরে তিনি জেলে। তার উপর একজন মহিলা হিসেবে জামিন পাবেন না এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কিছু হতে পারে না।”
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একটি বিচারাধীন মামলায় তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। আল্লাহ যদি কোনো দিন সুযোগ দেন বাংলার জনগণ তাকেও এমনি হয়ত একদিন সুযোগ দেবেন।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে না পারায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার খালেদার জামিন শুনানি পিছিয়ে দেয়। আগামী বৃহস্পতিবার দিন রাখার পর তা এগিয়ে রোববার করার দাবিতে এজলাস কক্ষে তুমুল হট্টগোল করেন বিএনপির আইনজীবীরা।
তাদের বিশৃঙ্খলার কারণে কয়েক দফায় চেষ্টা করেও বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে না পেরে বেলা সোয়া ১টার দিকে এজলাস থেকে নেমে যান বিচারপতিরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, এটা ‘নজিরবিহীন’, ‘বাড়াবাড়ির’ একটা সীমা থাকা দরকার।
আদালতে ওই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির আইনজীবীরা।
এর জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আজকে আমরা যদি না থাকতাম তাহলে সেখানে আরও অনেক কিছু ঘটত। সেক্ষেত্রে আমাদের যুবক আইনজীবীরা ধৈর্যসহকারে শান্তিপূর্ণভাবে শ্লোগান দিয়ে এসেছে। আমরা না থাকলে হয়ত আর কিছু হতে পারত।”
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ হবে। যেই রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে, যে কোনো আদালত মানবিক কারণে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দিতে পারেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আজকে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দ্বিতীয় রিপোর্টে কী আছে সেটিও জয়নুল আবেদীন উল্লেখ করেছেন। একটা অজুহাতে আদালত সাত দিন সময় দিয়েছেন, যা অপ্রত্যাশিত।”
আদালতকক্ষে আইনজীবীদের হট্টগোল নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আইনজীবীরা আজকে প্রচণ্ড প্রতিবাদ করেছে। তারা ন্যায়বিচার চান বলে দাবি করেছেন আদালত কক্ষে। ক্ষোভের থেকে করেছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছেন। আমরা তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এটা সম্ভবপর হয়নি। আমরা একই পরিবারের সবাই। তাদের সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেখানে থাকতে হয়েছে। আমি পেশাগত জীবনে এ রকম ঘটনা দেখেনি।”
মওদুদ বলেন, “আমরা পাকিস্তান আমল থেকে বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এমনকি আওয়ামী লীগের বড় নেতাদেরও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জামিন দেখেছি। এই ধরনের কোনো আচরণ বা এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমার পেশাগত জীবনে দেখিনি। তারপরও বলব, আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
“আমরা আশা করি, আগামী বৃহস্পতিবার বেগম জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন।”
‘বিনা চিকিৎসায়’ খালেদা জিয়া ‘ধুঁকে ধুঁকে মরছেন’ দাবি করে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “তার যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেই চিকিৎসা তিনি জেলখানায় পাচ্ছেন না। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন সেখানেও তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য আমাদেরকে সেখানে যেতে দিচ্ছেন না। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনকেও যেতে দেওয়া হয় না।”
“আমরা আগামী রোববারের কথা বলেছি, আদালত আমাদের কথা শুনলেন না। আদালত তার আগের আদেশে অনড় রইলেন।”
জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে বেগম জিয়া গত ৩০ তারিখের রিপোর্টে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার থেকেও আরও খারাপ অবস্থায় আছেন। তিনি এখন খেতেও পারছেন না। বেগম জিয়াকে আজকে সরকার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।”