দুদকের তালিকায় নাম বেড়ে ১৮৭

সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াদের ধরতে দুদক যে তালিকা করেছে, তাতে এ পর্যন্ত ১৮৭ জনের নাম যুক্ত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 06:59 PM
Updated : 4 Dec 2019, 06:59 PM

সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানের তদারক কর্মকর্তা দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান বুধবার সাংবাদিকদের এতথ্য জানিয়েছেন।

তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যক্তিরা রয়েছেন জানালেও ‘অনুসন্ধানের স্বার্থে’ তালিকায় থাকাদের নাম বলতে রাজি হননি তিনি।

ক্যাসিনো পরিচালনায় জড়িতদের সম্পদের অনুসন্ধানে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক উদ্যোগ নেয় দুদক।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে সেদিন একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. সালাউদ্দিন, সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী ও মামুনুর রশিদ চৌধুরী। এই দলে সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়।

তালিকা শুরুর দিকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সামশুল হক চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নাম রয়েছে বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।

দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ তালিকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মো. কাওছার, ব্যবসায়ী বনানী গোল্ড ক্লাবের সদস্য আবদুল আওয়াল ও আবুল কাশেম, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক ভূইয়া, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাতেনুল হক ভূইয়া, শিক্ষা অধিদপ্তরের ঠিকাদার মো. শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে।

এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নাম রয়েছে নতুন তালিকায়।

অন্যদিকে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে ওমানে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম ও জার্মানিতে থাকা জিসান। এছাড়া মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির জাকির, নয়াটোলার সেন্টু ও শোভন এবং বাড্ডার নাসিরের নামও রয়েছে এই তালিকায়।

এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও একাধিক ঠিকাদারের নাম রয়েছে বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দুদক মহাপরিচালক সাঈদ বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের ১৫৯ জনের তালিকা আমাদের আগেই ছিল। তাদের সাথে আরও ২৮ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। এই তালিকা করে অনুন্ধান চলছে। তাদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা আছেন। কিছু বেসরকারি ব্যক্তিবর্গ আছেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নাম আসলে আমার উল্লেখ করা ঠিক হবে না। এটা ইনকোয়েরি লেভেলে আছে। মেইনলি, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদ ও পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখানে ইনভলব আছেন।”

এই তালিকা ধরে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে জানান দুদক মহাপরিচালক সাঈদ।

সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযানের’ সঙ্গে তালিকা করে দুদকের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করলেও সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের চলমান অভিযান দুদককে ‘উৎসাহিত করেছে’।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এর পর ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বুধবার পর্যন্ত এই তালিকা থেকে ১৬টি জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগ নেতা পরিচয়ে আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনো হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্রিড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, ঢাকার তিন কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, তার সহযোগী এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান।